Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই নদীতে ট্রলারডুবি, ১৩ লাশ উদ্ধার

মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া ট্রলারে ছিল চার বছরের মেয়ে কেয়ামণি। সন্তানের খোঁজ না পেয়ে গতকাল মেঘনার তীরে তাঁর মায়ের (ডানে) এমন আহাজারি ছিল দিনভর l ছবি: প্রথম আলো

এবার একই দিনে দুটি নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল অন্তত ১৩ জনের। নিখোঁজ আছেন বেশ কয়েকজন। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বসুরচরে মেঘনা নদীতে ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে পৃথক ওই দুর্ঘটনা ঘটে। উভয় দুর্ঘটনাই ঘটেছে যাত্রীবাহী ট্রলারের সঙ্গে বালুবাহী জাহাজের (বাল্কহেড) ধাক্কায়।
ফতুল্লার আলীগঞ্জে বুড়িগঙ্গায় দুর্ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন: রুবেল মোল্লা (১৮), রুবেল মিয়া (৩০), জাকির হোসেন (২৮), ছমির উদ্দিন (৬৫), সাগর মিয়া (১১), করমজান বিবি (৬৫), মো. কাজল (২৮) ও মো. স্বপন (১৬)।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকালে ট্রলারটি চাঁদপুরের বেলতলী লেংটার মেলা থেকে ৭০ থেকে ৮০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা পৌনে একটার দিকে আলীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ‘সাথীবুল বাহার ২’ নামের বালুবাহী জাহাজের ধাক্কায় ট্রলারটি ডুবে যায়। আশপাশের লোকজনের সহায়তায় ট্রলারের বেশির ভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠলেও নিখোঁজ থাকেন বেশ কয়েকজন। খবর পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ ও কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা নাগাদ নদী থেকে ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ছমির উদ্দিনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে আরও একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ দুর্ঘটনায় ট্রলারের কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী আহত হন। তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মোমতাজ উদ্দিন জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত আটটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রাত হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার অভিযান স্থগিত রয়েছে। প্রয়োজনে শুক্রবার সকালে অভিযান চালানো হবে।
কেরানীগঞ্জের ইউএনও হাবিবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান জানান, ছয়টি লাশ শনাক্ত হওয়ার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে লাশ পরিবহন ও দাফনের জন্য নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে মুন্সিগঞ্জের বসুরচরে মেঘনায় গত বুধবার রাতে বালুবাহী জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুজনের পরিচয় মিলেছে। তাঁরা হলেন: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মনির হোসেনের শিশুকন্যা মুনিয়া (৪) ও ঢাকার শ্যামপুরের মো. শামীমের ছেলে মো. হাবিব (১৩)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত নয়টার দিকে গজারিয়ার বাউশিয়া ইউনিয়নের ট্রলারঘাট থেকে একটি ট্রলার ৭০ জনের মতো যাত্রী নিয়ে চাঁদপুরের লেংটার মেলায় যাচ্ছিল। এ সময় দমকা হাওয়ার কারণে নদীতে বড় বড় ঢেউ ছিল। দমকা হাওয়ার মধ্যে ট্রলারটি গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের বসুরচরে মেঘনার মাঝখানে পৌঁছালে ঢেউয়ের কারণে বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবাহী জাহাজ সেটিকে ধাক্কা দেয়। এতে জাহাজটির লম্বা সরু মাথায় আটকে যায় ট্রলারটি। এ সময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা গিয়ে ট্রলারের সঙ্গে আটকে থাকে। যাত্রীদের অনেকে জাহাজে উঠে পড়েন। কেউ কেউ সাঁতার কেটে তীরে ওঠেন। পুলিশ ও যাত্রীরা বলছেন, চার থেকে পাঁচজন নিখোঁজ আছেন।
বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ, র্যা ব-১১ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা চালান। ট্রলারডুবির ঘটনায় খোলা তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আরিফ হোসেন জানান, তাঁদের কাছে দুজনের নিখোঁজ থাকার অভিযোগ এসেছে।
গজারিয়া থানার ওসি ফেরদৌস হাসান জানান, ট্রলারটিতে ৭০ জনের মতো যাত্রী ছিল। দুজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।