Thank you for trying Sticky AMP!!

দুর্নীতির তদন্তে সাক্ষ্য দিয়ে এখন বেতনই তুলতে পারছেন না তিনি

যশোরে সরকারি হাঁস-মুরগি খামারের কর্মচারী শরিফ উদ্দীনের চাকরির মেয়াদ আছে আর মাত্র ১১ মাস। নিজের জেলা যশোর থেকেই তিনি অবসর নিতে চান। কিন্তু এর মধ্যে তাঁকে কুষ্টিয়ায় হয়রানিমূলক বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। মানবিক কারণে তা প্রত্যাহার করা হলেও যশোরে তাঁকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেওয়া হচ্ছে না। বেতন-ভাতা তিন মাস আটকে রাখা হয়েছে। চাকরিজীবনের শেষ প্রান্তে চরম কষ্টে দিন কাটছে তাঁর। 

আবু সাঈদ নামের একজন নিরাপত্তাপ্রহরীর বিরুদ্ধে সরকারি খামারের মুরগি, ডিম ও বাচ্চা চুরি করে বিক্রিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে সাক্ষ্য দেওয়ায় এই হয়রানি শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শরিফ উদ্দীন। তিনি অভিযোগ করেছেন, আবু সাঈদ খামারের সহকারী পরিচালক (এডি) এনামুল হকের পছন্দের লোক। সাঈদের বিপক্ষে সাক্ষী দেওয়ায় শরিফ উদ্দীনের ওপর ক্ষুব্ধ হন এনামুল। এ জন্য তাঁকে জোর করে বদলির ছাড়পত্র দিয়ে বেতন-ভাতা তিন মাস আটকে রেখেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘শরিফ উদ্দীন অত্যন্ত খারাপ কর্মচারী। তিনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। ওই খারাপ কর্মচারীকে আমি নেব না। আমি অধিদপ্তরে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনে আমাকে বদলি করা হোক।’


নিরাপত্তাপ্রহরী আবু সাঈদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করেছিলেন ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপনেশ্বর রায়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সাঈদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন তিনি। সে অনুযায়ী গত ৪ মার্চ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আবু সাঈদকে ঝিনাইদহের সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারে শাস্তিমূলক বদলির আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সাঈদকে যশোর থেকে বদলির ছাড়পত্র দেননি সহকারী পরিচালক এনামুল হক।


তদন্তকারী কর্মকর্তা তপনেশ্বর রায় বলেন, ‘নিরাপত্তাকর্মী আবু সাঈদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছি। অভিযোগের তদন্তকালে শরিফ উদ্দীনসহ কয়েকজন কর্মচারী সাক্ষী দিয়েছেন।’


সহকারী পরিচালক এনামুল হকের সুপারিশের ভিত্তিতে গত ৩ মার্চ শরিফ উদ্দীনকে যশোর থেকে কুষ্টিয়ার হাঁস-মুরগি খামারে বদলির আদেশ দেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) আজহারুল ইসলাম। এরপর এনামুল হক তড়িঘড়ি করে শরিফ উদ্দীনের ছাড়পত্র দিয়ে দেন। শরিফ ওই ছাত্রপত্র গ্রহণ না করে বদলির আদেশ বাতিলের জন্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে আবেদন করেন। পরিচালকের নতুন দায়িত্বে আসা নজরুল ইসলাম বদলির আদেশ বাতিল করে শরিফকে যশোরে পুনর্বহালের নতুন আদেশ দেন। কিন্তু এনামুল হক ওই আদেশ মানছেন না। প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতা থেকে শরিফের নাম মুছে দিয়েছেন তিনি। তাঁকে আর অফিসে যোগ দিতে দিচ্ছেন না।


শরিফ উদ্দীনের বাড়ি সদর উপজেলায়। ইতিমধ্যে তিনি চাকরিজীবনের ২৯ বছর ১ মাস পূর্ণ করেছেন। মাত্র ১১ মাস তাঁর চাকরির মেয়াদ রয়েছে। শরিফ বলেন, ‘চাকরিবিধি অনুযায়ী নিজের জেলা থেকে অবসরে নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু আমার বেলায় সেটা হচ্ছে না। চাকরিজীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমি চরম হয়রানির শিকার হচ্ছি। এডি এনামুলের অনিয়ম-দুর্নীতির সমর্থন না করা ও নিরাপত্তাকর্মী আবু সাঈদের বিরুদ্ধে তদন্তে সাক্ষী দেওয়ায় আমি চরম হয়রানির শিকার হচ্ছি। বেতন-ভাতা না পেয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছে।’


এ বিষয়ে অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শরিফকে যশোরে বহাল রেখে বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য এডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে তাঁকে বেতন-ভাতা প্রদান না করলে এডি এনামুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নলেজে (দৃষ্টিতে) রয়েছে।’