Thank you for trying Sticky AMP!!

দুর্ভোগ-ঝুঁকি যে পথে চলার সাথি

সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের প্রস্থ কম হওয়ায় এবং দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

সকাল ১০টায় সিলেট নগরের চৌহাট্টা থেকে যাত্রা শুরু। গন্তব্য সুনামগঞ্জ শহর। কিছু দূর যেতেই রিমঝিম বৃষ্টি। প্রাইভেট কারের চালক রেডিওতে গান ছেড়ে দিলেন। বৃষ্টি আর গানের ছন্দে ঘুম এসে গেছে। কিন্তু হঠাৎ ব্রেক কষার শব্দে ঘুম উধাও। ১-২ করে ২০ মিনিট গড়ালেও গাড়ি আর গড়ায় না। সামনে যে ঢাকার সড়কের মতো তীব্র যানজট!

এ অবস্থা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের। সড়কটি প্রয়োজনের তুলনায় সরু। পাশাপাশি সড়কে চলাচলকারী বাসগুলো লক্কড়ঝক্কড়। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। অথচ সুনামগঞ্জবাসীর ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। হাওরে বেড়ানোসহ নানা প্রয়োজনে সিলেটসহ অন্যান্য জেলার মানুষও সড়কটি ব্যবহার করেন।

স্থানীয় লোকজন বলছে, বাসে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু সড়কটি সরু হওয়ায় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মান্নারগাঁও গ্রামের বাদল রঞ্জন দাস বলেন, এই সড়কে আন্তজেলা রুটের পাশাপাশি ঢাকাগামী বাসও চলাচল করে। কিন্তু রাস্তা সরু হওয়ায় সব বাসই ধীরে ধীরে চলে। এতে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। দ্রুত সড়কটি প্রশস্ত করার দাবি জানান তিনি।

সুনামগঞ্জে যেতে পথে আরও চার-পাঁচবার যানজটে পড়তে হয়। আর গাড়ি চলতে শুরু করলে বাড়ছিল দুর্ঘটনার ভয়। কারণ, বিপরীতমুখী দুটি গাড়ি স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য রাস্তাটি পর্যাপ্ত প্রশস্ত নয়। মাঝেমধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা বাসগুলো খুব কাছ দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আর একটু হলেই চাপা দিয়ে পিষে ফেলবে।

এদিকে ঘণ্টাখানেক মোটামুটি ভালো রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলার পর হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি শুরু হয়। স্থানটার নাম জাউয়াবাজার। রাস্তার এ অংশে ছোট-বড় খানাখন্দ রয়েছে। কোথাও একেবারেই ভাঙাচোরা। জাউয়াবাজার বাজার পেরিয়ে কিছুটা যাওয়ার পর গাড়ি পুনরায় ভালো রাস্তায় ওঠে। এরপর সুনামগঞ্জে পৌঁছাতে লাগে আরও এক ঘণ্টা। সিলেট থেকে মাত্র ৬৮ কিলোমিটার দূরের এ শহরে প্রাইভেট কারের লাগল মোট দুই ঘণ্টা।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা কবির আহমদ ব্যবসার কাজে প্রায়ই সিলেট যাওয়া-আসা করেন। তিনি বললেন, ‘সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের মতো এমন লক্কড়ঝক্কড় বাস আর কোনো সড়কে আমি দেখিনি।’

কবিরের কথার প্রমাণ হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেল বিকেলে সুনামগঞ্জ থেকে বাসে সিলেটে ফেরার সময়। জরাজীর্ণ বাসটিতে আসন মাত্র ৩২টি। কিন্তু তোলা হলো অন্তত ৬০ জনকে। বিরতিহীন বলা হলেও পথে ২০-২৫টি স্থানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো হয়। এ ছাড়া সরু রাস্তা হওয়ায় বিপরীতমুখী বড় যানবাহন এলেই বাসটিকে থেমে গিয়ে সাইড দিতে হচ্ছিল। শুধু এ জন্যই পথে অন্তত ৩০ বার বাসটিকে থামতে হয়।

সুনামগঞ্জের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কথা হয়েছিল বাসচালক কাউসার মিয়ার সঙ্গে। তিনি বললেন, সড়ক প্রশস্ত হলে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো যেত। এতে সময় বাঁচত। কিন্তু এখন ধীরে গাড়ি চালাতে হয়। কারণ, পদে পদে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।

এই ঝুঁকির বড় কারণ সরু এ সড়কের দুপাশে থাকা হাওর ও খাল। প্রায়ই এ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। সে কথা বললেন সুনামগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপের মহাসচিব মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া। তাঁর মতে, দুর্ঘটনার ভয়েই মালিকেরা সড়কটিতে নতুন বাস নামাতে চান না।

মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৪০০টি বাস সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যাওয়া-আসা করে। এর বাইরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও শতাধিক বাস রয়েছে।

প্রশস্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের প্রস্থ ১৮ ফুট। সড়কের দুপাশে আরও তিন ফুট পাকা করার জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ১৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। সওজের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে এই কাজের দরপত্র আহ্বানসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া চলছে।

সিলেট সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, তিনটি ধাপে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কাজ হবে। প্রথম ধাপে সুনামগঞ্জ বাইপাস অংশের কাজ চলমান রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে সিলেটের টুকেরবাজার থেকে লামকাজী অংশের কাজের জন্য শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে। আর তৃতীয় ধাপে সুনামগঞ্জ অংশের কাজটি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) সাংসদ অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘এটি আমাদের প্রধান সড়ক। এটিকে মহাসড়কে উন্নীত করতে আমরা কাজ করছি। প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন হওয়ার পরও কেন কাজ শুরু হচ্ছে না, খোঁজ নিয়ে দেখব।’