Thank you for trying Sticky AMP!!

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা শুনতে পাবেন প্রথম আলোর খবর

লুই ব্রেইলের জন্মদিন আজ। ১৮০৯ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। লুই মাত্র তিন বছর বয়সে দৃষ্টি হারান। তবে তিনিই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির আবিষ্কার করে অন্যদের জন্য শিক্ষার দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। কাকতালীয়ভাবে মিলে গেলেও আজ বৃহস্পতিবার লুইয়ের জন্মদিনেই যাত্রা শুরু করল প্রথম আলোর শ্রুতি অ্যাপ। শ্রুতির মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রথম আলোর খবর শুনতে পাবেন। শ্রুতির স্লোগান হচ্ছে—শুনবে খবর, জানবে তারা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আইনজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাই নিজ নিজ মুঠোফোনে শ্রুতি অ্যাপ ডাউনলোড করে তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রথম আলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিয়ান বুশরা ‘আজ প্রথম ফুলের পাব প্রসাদখানি, তাই ভোরে উঠেছি। আজ শুনতে পাব প্রথম আলোর বাণী, তাই বাইরে ছুটেছি...’ রবীন্দ্র সংগীতটি গেয়ে শোনান। গান শুরুর আগে তিনি বলেন, গানটি আজকের অনুষ্ঠানের মূল সুরের সঙ্গেও মিলে গেছে। অনুষ্ঠানে আরেকটি আধুনিক গান গেয়ে শোনায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফারহিম আনজুম সোহানা।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য আজ বৃহস্পতিবার ‘প্রথম আলো শ্রুতি’ নামের নতুন অ্যাপের উদ্বোধন করা হলো। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রথম আলো অনলাইনের সংবাদ শোনা যাবে। প্রথম আলো কার্যালয়, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ৪ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রথম আলোর বিদেশ সংস্করণের সম্পাদক সেলিম খান। তিনি বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দেখতে না পেলেও যাতে শুনতে পারেন প্রথম আলো সে উদ্যোগ নেয় ২০১০ সালে। কিন্তু কিছু দূর অগ্রসর হয়ে হোঁচট খেতে হয়। তবে প্রথম আলোর উদ্যোগ থেমে যায়নি। তারই ফলাফল আজকের শ্রুতি অ্যাপ। তিনি আরও বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে প্রথম আলো পড়তে পারেন সে জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে প্রথম আলো। বিনিয়োগও করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় ২০১২ সালের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। শুরুতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনেকটা ‘রোবোটিক ভয়েস’এ খবর শুনতে হতো। তারপর প্রথম আলোর ডিজিটাল টেকনোলজি বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক কিউ এম আশফাক আলীর উদ্যোগে শ্রুতি অ্যাপ আলোর মুখ দেখে। আর এ কাজে ২০১০ সাল থেকেই একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সহযোগিতা করেন ভিউ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম খান। তাঁর সঙ্গে ইনোভেশন গ্যারেজ লিমিটেডের আশিকুর রহমানদের মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যুক্ত হন।

অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের ‘আজ প্রথম ফুলের পাব প্রসাদখানি’ গানটি গেয়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিয়ান বুশরা। ছবি: প্রথম আলো

সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি খবর পাগল মানুষ। প্রথম আলোর অডিও ভয়েসের মাধ্যমে খবর পড়ার প্রথম উদ্যোগ ‘শ্রুতি’ বন্ধ হয়ে গেলেও আমি তাতে লেগেই ছিলাম। গত ডিসেম্বর মাস থেকে আমি আমার মোবাইলে নতুন শ্রুতি অ্যাপ ডাউনলোড করেছি। এখন দিনে কয়েকবার প্রথম আলোর খবর পড়ি। টক টাইমের খরচেই পুরো সপ্তাহের খবর পড়তে পারি। ভবিষ্যতে এ অ্যাপ ব্যবহার করে অন্যান্য বইও পড়া যাবে।’

আশিকুর রহমান জানালেন, আজ থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই নিজেদের মুঠোফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে নেন।

প্রথম আলোর কিউ এম আশফাক আলী জানালেন, গুগল প্লে স্টোর থেকে শ্রুতি অ্যাপ ডাউনলোড করে চালাতে হবে। তবে অ্যাপটি সঠিকভাবে চালাতে গুগল টেক্সট টু স্পিচ ইনস্টল করা থাকতে হবে। যে কোনো অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল স্মার্ট ফোনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। প্রথম আলোর অনলাইনে থাকা প্রথম ২০টি সংবাদ তাঁরা পড়তে পারবেন। ভবিষ্যতে প্রথম আলো অ্যাপটি উন্নয়নে কাজ করবে।

অ্যাপটি নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন স্পর্শ ব্রেইল প্রেসের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীন। ছবি: প্রথম আলো

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সংগঠন ভিপসের সাধারণ সম্পাদক নাজমা আরা বেগম পপি বলেন, ‘লুই ব্রেইলের জন্মদিনের মতো প্রথম আলোর শ্রুতির শুভযাত্রার দিনটিও আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে অ্যাপ চালু করে থেমে গেলে চলবে না। অ্যাপটি কেমন চলছে তার ফলোআপ করতে হবে। যেকোনো কারিগরি সহায়তায় আমরা প্রথম আলোর পাশে থাকব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোহাম্মদ সারওয়ার হোসেন খান বলেন, ‘প্রথম আলোর খবর শুনতে পারলে আমরা আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারব। এ উদ্যোগের জন্য প্রথম আলোকে অনেক ধন্যবাদ।’

স্পর্শ ব্রেইল প্রেসের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীন অনুভূতি প্রকাশের শুরুতেই সবাইকে অনুরোধ করেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শব্দটির পরিবর্তে দৃষ্টিজয়ী শব্দটি বলা ও লেখার জন্য। কেননা এই ব্যক্তিরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চতর পর্যায়ের পাঠ্যবইও যাতে শ্রুতি অ্যাপের মাধ্যমে পড়া যায়, সে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রথম আলোর প্রতি অনুরোধ জানান।

এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফারহিম আনজুম সোহানার আধুনিক গান পরিবেশন। ছবি: প্রথম আলো

বক্তব্যে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রথম আলোর দিকে দৃষ্টি রাখার জন্য আহ্বান জানান।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি হচ্ছে। একদিন হয়তো এমন কিছু আবিষ্কার হবে যাতে করে প্রতিবন্ধী বলেই কিছু থাকবে না।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নিজেরাই সেলফি তুলছিলেন। বুশরা ও সোহানার গান ভিডিও করেন কেউ কেউ। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রায় বেশির ভাগেরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। এই ছবি, ভিডিও তাঁরা পোস্ট করবেন ফেসবুকে।