Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশি ফলই কিনছেন সবাই

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ভরে উঠেছে মৌসুমি ফলে। ছবিটি কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীর বিভিন্ন আড়ত, বাজার ও দোকান এখন ভরে উঠেছে আম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুল, আনারসসহ নানা রকম মৌসুমি ফলে। ক্রেতাদেরও আগ্রহ এই মৌসুমি ফলের দিকে। তাঁরা বলছেন, এসব দেশি ফল সারা বছর পাওয়া যায় না। তাই এই সময়টাতে দেশি ফলই বেশি কিনছেন। এতে খুচরা দোকান ও আড়তে মৌসুমি ফলের চাহিদা বেড়েছে। কমেছে আপেল, মালটা, আঙুরের মতো ভিনদেশি ফলের চাহিদা।
রাজধানীর, হাতিরপুল, কারওয়ানবাজার, বউবাজার, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, ফলের স্থায়ী দোকানের পাশাপাশি অস্থায়ী বেশ কিছু দোকান বসেছে, যেখানে মৌসুমি ফল বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আম, লিচু ও সিলেটের জলডুবি আনারস।
রাজধানীর হাতিরপুলের ফল বিক্রেতা মো. আলী গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানান, মৌসুমি ফলের এই সময়টাতে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা পদের ফল আসতে শুরু করে। মানুষের আগ্রহও থাকে এই দেশি ফলের দিকে। আপেল, মালটা, বেদানা, আঙুরের মতো ফলগুলোর চাহিদা বেশ কমে যায়। অপর ফলবিক্রেতা মো. সোহাগ বলেন, ‘সারা বছর মানুষ অপেক্ষা করে দেশি ফলের লাইগ্যা। এগুলো বাজারে আইলে অন্য ফলের বিক্রি কিছুটা কইমা যায়।’

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ভরে উঠেছে মৌসুমি ফলে। ছবিটি কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম

কারওয়ান বাজারে মো. শফিকুল ইসলাম (৫৮) প্রায় ২৪-২৫ বছর ধরে ফল বিক্রি করেন। তাঁর ভাষ্য, ‘মৌসুমি ফল মানুষ নিজে খায়, আত্মীয়গো লাইগ্যা কিনে। এই জন্যে অন্যান্য বিদেশি ফলের চাহিদা কমে।’
ফলের এ মৌসুমে ভিন্ন জীবিকার অনেকে ফল বিক্রি করে বেশ আয় করে থাকেন। এমন একজন আবদুল হান্নান। সোনারগাঁও হোটেলের সামনে তিনি আগে পোশাক বিক্রি করতেন। গত কয়েক বছর ধরে মৌসুমি ফলের সময়ে ওই ব্যবসা ছেড়ে আম-লিচু বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘ফলে নগদ লাভ বেশি আর বিক্রিও ভাল তাই এই সময়ে প্রতি বছর আমি এই ব্যবসা করি। আমার মতো অনেকেই এই ব্যবসা করে।
অনেক ফল বিক্রেতা এ সময় অন্য ফল বিক্রি বাদ দিয়ে কেবল মৌসুমি ফল বিক্রি করেন। কারওয়ান বাজারের জাকির হোসেন এমন সময়ে আপেল, পেঁপে, কমলা, আঙুর বিক্রি করেন। কিন্তু গত এক মাস থেকে তিনি আর ওই ফল বিক্রি না করে লিচু আর আম বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘এই সময় মানুষ দেশি ফল কেনে বেশি, ওগো চাহিদার কথা মাথায় রাইখ্যা ব্যবসাও বদলাই ফেলি। আবার মৌসুমি ফল যাইবো আবার ওই ফল বেচমু।’

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ভরে উঠেছে মৌসুমি ফলে। ছবিটি কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম

কলাবাগান মাঠ-সংলগ্ন রাস্তার পাশে বসেছে আমের কয়েকটি দোকান। সেখানে আম কিনছিলেন ধানমন্ডির বাসিন্দা সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সারা বছর অপেক্ষা করি এই সময়ের জন্য। দেশি ফল আমাদের বাসার সবার পছন্দ।’ তিনি বলেন, ‘সারা বছরই ফল খাওয়া হয়, তবে এই সময়ে দেশি ফল বেশি খাওয়া হয়। অন্য ফল সব সময় পাওয়া যায়। আম-লিচু সব সময় পাওয়া যায় না।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা অঞ্চলের হিমসাগর আম পাওয়া যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আমের আকার ও মান অনুসারে কেজি প্রতি এই আম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১২০ টাকায়। রাজশাহীর ল্যাংড়া আম পাওয়া যাচ্ছে কম। ১০০ লিচু মিলছে ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। জলডুবি আনারস এক হালি মিলছে ৪০-৬০ টাকায়। ভ্যানে করে বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে এই আনারস কেটে কেটে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। জামরুল ১০০-১২০ টাকা, জাম ১৫০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আকার ভেদে কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ভরে উঠেছে মৌসুমি ফলে। ছবিটি কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম

মৌসুমি ফলের দাপটে বিদেশি ফল আমদানি কমে যায় বলে জানালেন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২৫-৩০ বছরের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি এ সময় মানুষ মৌসুমি ফল বেশি কেনে। এ জন্য বিদেশি ফলের আমদানিও কমে যায়। তিনি বলেন, এক মাস আগেও যেখানে ৮০-৯০ ট্রাক বিদেশি ফল আমদানি করতে হতো, সেখানে এখন তা ১৫-২০ ট্রাকে নেমে এসেছে।