Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশে করোনা পরীক্ষার পরিসর বাড়ছে

দেশে কোভিড–১৯ রোগের পরীক্ষার পরিসর ধীরে ধীরে বাড়ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) আগে থেকেই পরীক্ষা চলছে। অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানে সীমিত আকারে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে শুধু একটি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত বাকি ১১টি ল্যাবে গতকাল পর্যন্ত পরীক্ষা শুরু হয়নি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে রোগের পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে দেশে পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের অভিযোগ, বারবার অনুরোধ করার পরও আইইডিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারছে না। পরীক্ষার সুযোগ পেলেও পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারছেন না। অন্যদিকে প্রভাবশালীরা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরকে নিয়মিত চাপ দিচ্ছেন।

আইইডিসিআর ২৮ জানুয়ারি থেকে কোভিড–১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার খবর প্রকাশ করতে থাকে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় কত নমুনার পরীক্ষা করেছে, তা–ও জানিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা তারা প্রতিদিনের সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রকাশ করে। একই সঙ্গে হিসাবটি সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমে পাঠায়। এ ক্ষেত্রে কত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, সেই হিসাবের তথ্যের গরমিল আছে।

২৮ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৬৩ দিনের হিসাবে দেখা যায়, তারা মোট ১ হাজার ২৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করেছে। কিন্তু গতকাল তারা বলেছে, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করেছে। দৈনিক হিসাবের চেয়ে এ ক্ষেত্রে তারা ৬৩টি নমুনা বেশি পরীক্ষা দেখিয়েছে।

এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

ঢাকার পরিস্থিতি

মহাখালীতে অবস্থিত জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি তিন দিন আগে কোভিড–১৯ শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করেছে। এ পর্যন্ত তারা মাত্র একটি নমুনা পরীক্ষা করেছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে পরীক্ষা শুরু হয়েছে দুই দিন আগে। প্রথম দিন অর্থাৎ ২৯ মার্চ তারা তিনটি নমুনা পরীক্ষা করে। গতকাল তাঁরা ছয়টি নমুনা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সমীর সাহা।

>

পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আইইডিসিআরসহ চারটি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে। বাকি ১১ টিতে প্রস্তুতি চলছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহবাগের পুরোনো বেতার ভবনে একটি ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে। সেখানে কোভিড–১৯ পরীক্ষা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) একটা ট্রায়াল দেব।’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া পরীক্ষার জন্য যারা যোগাযোগ করবে, তাদের নমুনাও সংগ্রহ করা হবে।

আইইডিসিআরের নমুনা সংগ্রহ

যে কেউ চাইলেই আইইডিসিআরে নমুনা পরীক্ষা করাতে পারবেন না। প্রথমে আইইডিসিআরের নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করতে হয়। ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা চিকিৎসকেরা রোগের লক্ষণ জিজ্ঞাসা করেন, তারপর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন নমুনা সংগ্রহ করা হবে কি হবে না। নমুনা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হলে প্রশিক্ষিত মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে আনেন।

আইইডিসিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ রকম ২৪ জনের একটি দল ঢাকায় কাজ করেন। তাঁরা দুই পালায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি বা হাসপাতালে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন। তবে গত সপ্তাহে কয়েকজন টেকনোলজিস্ট কাজে ইস্তফা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মীরজাদী সেব্রিনা বলেছেন, ‘তাঁরা একটি প্রকল্পে কাজ করতেন। তাঁরা সরকারি স্থায়ী কর্মচারী নন।’

কারা পরীক্ষা করাতে পারেন

অনেকেই আইইডিসিআরের নির্ধারিত নম্বরে ফোন করে সাড়া পাচ্ছেন না। এমন অভিযোগ কয়েক সপ্তাহ ধরে শোনা যাচ্ছে। যাঁরা সাড়া পাচ্ছেন না, তাঁদের অনেকে ফেসবুকে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হচ্ছে।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক দীর্ঘদিন অ্যাজমায় ভুগছেন। এ ধরনের রোগীরা সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। জ্বর ও কাশি হওয়ার পর তিনি ২৩ মার্চ আইইডিসিআরের হটলাইনে বারবার যোগাযোগ করেন। সাড়া না পেয়ে ফেসবুকে বিষয়টি লেখেন। তার নমুনা নেওয়া হবে একাধিবার এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করতে যাননি মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা।

এরপর ওই শিক্ষক একজন আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। এরপর ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় তাঁর নমুনা সংগ্রহ করেন টেকনোলজিস্টরা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁকে পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়নি।

মীরজাদী সেব্রিনা বলেছেন, দু–একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়।

চাপে পরীক্ষা

সাধারণ মানুষ পরীক্ষা করাতে পারছেন না—এ অভিযোগ পুরোনো, এ অভিযোগ অনেকের। কিন্তু আইইডিসিআর চাপে পড়ে কিছু অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দৈনিক ৮ থেকে ১০ জন প্রভাবশালী ও ভিআইপিকে বা তাঁদের বাড়ির লোকদের পরীক্ষা করতে হচ্ছে। তাঁদের বাড়তি নমুনা সংগ্রহ করতে লোক পাঠাতে হয়। এসব ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দেওয়ার চাপও থাকে।

এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, যাঁরা বয়স্ক, যাঁদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

ঢাকার বাইরে পরীক্ষা

গতকাল নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রংপুর ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে গতকালই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন।

রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নুরুন্নবী প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেছেন, ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কর্মকর্তারা এসেছেন। আশা করা যায় বৃহস্পতিবার থেকে পরীক্ষা শুরু হবে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন দেবনাথ বলেছেন, ল্যাবরেটরির আসবাব সাজানো–গোছানোর কাজ চলছে। আজকালের মধ্যে পরীক্ষা শুরু হবে। তাঁরা পরীক্ষার জন্য ২২০টি কিট পেয়েছেন।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) চার দিন আগে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত তারা ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছে।

কক্সবাজারে একটি ল্যাবরেটরি আছে আইইডিসিআরের। গতকাল পর্যন্ত সেখানে কোনো পরীক্ষা হয়নি। একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁকে নমুনা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়নি।

দেশে কোভিড–১৯ বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পরীক্ষা খুব কম হচ্ছে। লোকজন এগিয়ে আসছে না। পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার বা ফোন করার আহ্বান জানান তিনি।

কিট নিয়ে কী হচ্ছে

দুই সপ্তাহ আগেও দেশে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিটের সংকট ছিল। সেই সংকট কিছু হলেও কাটতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে কিট দিয়ে সহায়তা করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে কিটের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

করোনা সংক্রমণ পরীক্ষা করার জন্য একজন প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নাটোরের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে ২০০ কিট দেওয়া হয়েছে। গত রোববার সিংড়া পৌরসভার মেয়র মো. জান্নাতুল ফেরদৌস এসব কিট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের হাতে তুলে দেন।

 অনেক জেলাতেই এই কিট ব্যবহার করার মতো উপযুক্ত ল্যাবরেটরি নেই। বিভাগীয় পর্যায়ে ল্যাবরেটরি চালু করতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। তখন উপজেলা হাসপাতাল কিট দিয়ে কী করবে, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে। মীরজাদী সেব্রিনা অবশ্য বলেছেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।