Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশে দিনে খাদ্যে মাথাপিছু ব্যয় ৬০ টাকা

দৈনিক খাদ্যের জন্য মাথাপিছু ৬০ টাকা খরচ করতে পারে এ দেশের মানুষ। এই টাকাতেই তিন বেলার খাবার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে খাদ্যের জন্য মাথাপিছু ব্যয়ের এই চিত্র পাওয়া গেছে।

বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, এক বেলায় খাবারের জন্য খরচ হয় ২০ টাকা। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই টাকায় এক বেলায় একজন মানুষ কী খেতে পারে?

একটি পরিবার মাসিক বরাদ্দের কত অংশ কোন খাদ্যের জন্য ব্যয় করে, তারও তথ্য দিয়েছে বিবিএস। সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় চাল বা আটার জন্য। দিনে মাথাপিছু এই খাতে ব্যয় হয় ১৬ টাকা। এরপর ১০ টাকা ব্যয় হয় মাছের জন্য। মাংস ও ডিমের জন্য খরচ ৮ টাকা। এরপর সবচেয়ে বেশি খরচ হয় মসলার জন্য। এতে ৭ টাকা খরচ হয়। সবজির জন্য খরচ হয় ৫ টাকা। বাকি ১৪ টাকা খরচ হয় ডাল, দুধ ও দুধজাতীয় খাদ্য, ভোজ্যতেল, ফল, চিনি, গুড়, পানীয়সহ অন্যান্য খাবারের জন্য।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল সোমবার খুচরা দোকানে কেজিপ্রতি মাঝারি মানের (মিনিকেট) চালের দাম ছিল ৫০ টাকা। এক কেজি মসুর ডালের দাম ১১০ টাকা, এক কেজি মুরগি (সোনালি) ২৫০ টাকা। লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ৮৫-৯০ টাকা। পেঁয়াজ এক কেজি ১২০ টাকা। দুটি ডিম ২০ টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে খাদ্যের যা দাম, তাতে এই টাকায় শুধু ভাত ও সবজি হয়তো খাওয়া যাবে। এতে দৈনিকের পুষ্টির প্রয়োজন মিটবে না, মিটছে না।’

বিবিএসের জরিপ বলছে, মাসে গড়ে একটি পরিবার খাদ্যের জন্য ৭ হাজার ৩৫৪ টাকা খরচ করে। পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৪ দশমিক শূন্য ৬। একজন ব্যক্তি মাসে খরচ করে ১ হাজার ৮১১ টাকা। দিনে খরচ করতে পারে মাত্র ৬০ টাকা। বিবিএস সর্বশেষ অর্থাৎ ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ করেছিল। এই জরিপ চূড়ান্ত হয়েছে এ বছরের জুন মাসে। জরিপের পর আয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ে খাবারের দামও বেড়েছে।

>

খাদ্যের জন্য খুব সামান্যই ব্যয় করতে পারে নিম্ন আয়ের মানুষ।
সমাজের এই অংশে পুষ্টি পরিস্থিতিও খারাপ।

অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা গড় হিসাব। কিছু মানুষকে ৬০ টাকারও কম খরচ করতে হয় খাবারের জন্য। শহরের মানুষের জন্য, বিশেষ করে বস্তিবাসীর জন্য এই খরচ আরও কম। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর। অপুষ্টির কারণে বস্তির শিশুদের মধ্যে খর্বতার হার সবচেয়ে বেশি।’

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, খানাপ্রতি মাসিক খাদ্যের ব্যয় বাড়ছে। ২০১০ সালের জরিপে দেখা যায়, মাসিক খানাপ্রতি খাদ্যের জন্য ব্যয় হতো ৬ হাজার ৩১ টাকা। ২০০৫ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২০৯ টাকা।

মাথাপিছু কতটুকু খাবার এ দেশের মানুষ খাচ্ছে, তারও হিসাব দিয়ে বিবিএস বলছে, গড়ে এ দেশের মানুষ দৈনিক ৯৪৭ দশমিক ৮ গ্রাম খাবার খায়। দৈনিক খায় চাল বা আটা ৪০৬ গ্রাম, আলু ৬৫ গ্রাম, সবজি ১৬৭ গ্রাম। মাংস ও ডিম খায় ৩৯ গ্রাম। মাছ খায় মাত্র ৬২ গ্রাম। মাছের চেয়ে বেশি খায় পেঁয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য মসলা।

খাদ্যশক্তি বা ক্যালরির হিসাবও দিয়েছে বিবিএস। তারা বলছে, বাংলাদেশে মানুষ গড়ে দৈনিক ২ হাজার ২১০ কিলোক্যালরি খাদ্য থেকে পায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১ হাজার ৪২১ কিলোক্যালরি পায় চাল ও গমজাতীয় খাবার থেকে।

শরীর সুস্থ ও অটুট রাখার জন্য আমিষ খুবই জরুরি। বিবিএস বলছে, বাংলাদেশের মানুষ দৈনিক মাথাপিছু ৬৩ দশমিক ৮০ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করে বিভিন্ন খাদ্যের মাধ্যমে। আমিষ গ্রহণের পরিমাণ গ্রামের মানুষের চেয়ে শহরের মানুষের মধ্যে কিছুটি বেশি।

পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আমিষের প্রধান উৎস চাল বা গম। ৩০ গ্রামের বেশি আমিষ আসছে এ উৎস থেকে। কিন্তু পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাছ, মাংস থেকে পাওয়া আমিষ শরীরের জন্য বেশি উপকারী। মাত্র ২০ শতাংশ আমিষ আসে এই উৎস থেকে।

পরিস্থিতির সহজ কোনো সমাধান নেই। আয় বাড়লে এবং দ্রব্যমূল্য কমলে মানুষ বেশি ধরনের খাদ্য কিনতে পারবে। প্রাণিজ আমিষ বেশি পাবে। অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, সমাজে খাদ্যবৈষম্য আছে। অনেকে খাদ্য অপচয় করে। বৈষম্য ও অপচয় বন্ধ করা সম্ভব হলে দরিদ্র মানুষের খাদ্যের মান বাড়বে।