Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশে প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে তিনটির জন্ম অস্ত্রোপচারে

দেশে প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে ৩টির জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত হারের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্ধেকের বেশি অস্ত্রোপচার হচ্ছে প্রয়োজন ছাড়াই।

‘বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ ২০১৬’-তে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে বছরে প্রায় ৩১ শতাংশ শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে জরিপের এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ১০-১৫ শতাংশ প্রসবে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা হিসেবে অস্ত্রোপচার করা দরকার।

তবে জরিপের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারে। দেশে ২০০১ সালে ৩ শতাংশ শিশুর জন্ম হতো অস্ত্রোপচারে। ২০১০ সালে তা বেড়ে ১২ শতাংশ হয়। আর বর্তমানে ৩১ শতাংশ। এই বৃদ্ধিকে গবেষকেরা আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে বলছেন, বাংলাদেশে অস্ত্রোপচার বেড়েছে ব্যবসায়িক কারণে।

জরিপকারীরা বলছেন, দেশে বছরে ৩১ লাখ শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে ১০ লাখ শিশুর জন্ম হয় অস্ত্রোপচারে। ৭ লাখ ৫০ হাজার শিশুর অস্ত্রোপচারে জন্ম হয় ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। ৪৩ হাজার এনজিও হাসপাতালে। বাকি সরকারি হাসপাতালে।

অনুষ্ঠানে বিলি করা কাগজপত্রে বলা হয়েছে, অস্ত্রোপচারে তাৎক্ষণিক কিছু জটিলতা দেখা দেয়। রক্ত পরিসঞ্চালনের দরকার হয়, কিছু ক্ষেত্রে জরায়ু অপসারণ করতে হয়, কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়। এর সঙ্গে বাড়তি খরচের সম্পর্ক আছে।

সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসবে খরচ হয় ১২ হাজার ৪০০ টাকা, স্বাভাবিক প্রসবে ৩ হাজার টাকা। আর বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে ২০ হাজার এবং স্বাভাবিক প্রসবে ৬ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়।

জরিপে দেখা গেছে, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে প্রসবের হার বাড়ছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক প্রসবের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয় না। বলা হয়েছে, স্বাভাবিক প্রসবের জন্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের প্রস্তুতি শূন্য।

অনুষ্ঠানে একাধিক গবেষক বলেন, দেশে অপ্রয়োজনে অনেক শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারে। আবার দরিদ্র পরিবারের প্রসূতি এই জীবনদায়ী সেবা পাচ্ছে না, তাদের অনেকের মৃত্যু হচ্ছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রয়োজন ছাড়া অস্ত্রোপচার করানোর সঙ্গে নীতিনৈতিকতার সম্পর্ক আছে। তবে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর ওপর নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার।

অনুষ্ঠানে একজন গবেষক বলেন, অস্ত্রোপচারে শিশু জন্মহার সবচেয়ে বেশি ব্রাজিলে। এই হার কমাতে ওই দেশের সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে হাসপাতালকে প্রমাণ রাখতে ও দেখাতে হবে যে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন আছে বা ছিল। এ ছাড়া স্বাভাবিক প্রসব বাড়াতে ১৫০টি হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) এই জরিপ করেছে। এতে কারিগরি সহায়তা করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনসংখ্যা গবেষণাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান মেজর ইভালুয়েশন। আর আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি ও যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ইউকেএআইডি