Thank you for trying Sticky AMP!!

বাবার কাছে বাংলাদেশের গল্প শুনে চলেই এলেন তাঁরা

আনোয়ারায় ফাতিমা বেগম ইলিয়ট, তাঁর স্বামী ফিলিপ ইলিয়ট, ভাই আবদুল জব্বার জলিল গতকাল সন্ধ্যায়। প্রথম আলো

বাবার কাছে কত বার যে বাংলাদেশের গল্প শুনতেন! কল্পনায় এঁকে নিতেন বাংলাদেশের ছবি। আজ বাবার সেই ভালোবাসার বাংলাদেশকে দেখছেন কাছ থেকে। কল্পনায় যা ভাবতে পারেননি, সেটাও যেন পেলেন এসে। অজানা-অচেনা মানুষের ভালোবাসা।

তাঁরা হলেন ব্রিটিশ নাগরিক ফাতিমা বেগম ইলিয়ট (৫৯), তাঁর স্বামী ফিলিপ ইলিয়ট (৬০) ও ফাতিমার ভাই আবদুল জব্বার জলিল (৫৮)।

ফাতিমা ও জব্বার জলিল জানান, যুক্তরাজ্যে তাঁদের জন্ম হলেও বাংলাদেশের গল্প শুনে তাঁরা বড় হয়েছেন। সেসব গল্প শুনতে তাঁদের খুব ভালো লাগত। বাবা আবদুল জলিল বেঁচে থাকতে দেশে আসার ইচ্ছে থাকলেও, পারেননি। বাবার মৃত্যুর ৩৩ বছর পর বাপ-দাদার ভিটা দেখতে এই প্রথম এলেন বাংলাদেশে।

গত সোমবার রাতে তাঁরা চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলীতে আসেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ব বরৈয়া গ্রামে গিয়ে দাদার কবর জিয়ারত করেন।

গতকাল বিকেলে তাঁদের আসার খবর পেয়ে শত শত গ্রামবাসী জড়ো হন। ওই সময় তাঁরা গ্রামবাসীকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন, সময় কাটান।

আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের পূর্ব বরৈয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল জলিল ১৯৫২ সালে যুক্তরাজ্যে যান। তিনি নৌপথে মিয়ানমার ও পাকিস্তান হয়ে সেখানে যান। সেখানে গিয়ে প্রথমে শেফের চাকরি নেন। পরে ব্যবসায় জড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত হন। ১৯৫৬ সালে বিয়ে করেন সেখানকার তেরিজা নামের এক নারীকে। ওই ঘরে জন্ম নেন তিন ছেলে ও চার মেয়ে। তাঁদের সবাই সেখানে বিভিন্ন পেশায় জড়িত আছেন। যুক্তরাজ্যে ১৯৮৭ সালে মারা যান আবদুল জলিল। সেখানেই সমাহিত করা হয়েছে তাঁকে। তাঁর মৃত্যুর ৩৩ বছর পর তাঁর দুই সন্তান এলেন দেশে। তাঁদের মা তেরিজা বেঁচে আছেন।

ফাতেমা, ইলিয়ট ও জব্বার জলিল গত সোমবার বাংলাদেশে আসেন। পরে মঙ্গলবার পূর্ব বরৈয়া গ্রামে গিয়ে বাপ-দাদার ভিটায় সময় কাটান। ফাতিমা গৃহিণী। তাঁর স্বামী ও ভাই পেশায় প্রকৌশলী।

ফাতিমা বেগম ইলিয়ট বলেন, ‘অনেক আশা ছিল বাংলাদেশে আসার। ভাই ও স্বামীকে নিয়ে এসে খুব ভালো লাগল। বাবার গ্রামের লোকজন আমাদের পরম মমতায় আগলে নিয়েছেন।’

আবদুল জব্বার জলিল বলেন, ‘প্রথমবার বাবার দেশে এলাম, অসাধারণ উপলব্ধি। আমরা আবেগতাড়িত হলাম। বারবার আসার ইচ্ছে আছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর বিস্ময়। এ দেশের শাকিব আল হাসান ও মাশরাফিদের দেখলে দেশের কথা মনে পড়ে।

ফাতিমা বেগম ইলিয়টের স্বামী ফিলিপ ইলিয়ট বলেন, ‘এত সুন্দর দেশ, ভাবতে অবাক লাগছে!’

আবদুল জলিল পরে বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এই সংসারে তাঁর দুই ছেলে এক মেয়ে রয়েছেন। স্ত্রী বেঁচে নেই।

আবদুল জলিলের বাংলাদেশি সংসারের আরেক সন্তান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (৩৪) বলেন, ফাতিমাদের সঙ্গে তাঁদের খুব একটা যোগাযোগ নেই। তবে একদিন হুট করে ফাতিমারা বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে যোগাযোগ করলে তাঁরা স্বাগত জানান। আনোয়ারা উপজেলার বটতলী রুস্তমহাটে তাঁর বাসাতেই এখন ফাতিমারা উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘ভয়ে ছিলাম লন্ডন থেকে এসে তাঁরা কোনোভাবে অস্বস্তিতে পড়েন কি না। কিন্তু তাঁরা অসাধারণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন সবকিছু।’