Thank you for trying Sticky AMP!!

দ্রুততম সময়ে আইসিজের অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের আশা

আইসিজের শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবুবকর মারি তামবাদু


রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা নিয়ে মিয়ানমারের স্ববিরোধী সাফাইয়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) তিন দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় গাম্বিয়া মূল বিচার শুরুর আগে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের জন্য আইসিজের কাছে আবেদন করেছে। দুই পক্ষের শুনানির পর আইসিজে স্বল্পতম সময়ে আদেশ দিতে পারেন। 

দ্য হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ওই আদালতে শুনানির সময় উপস্থিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলে আজ শুক্রবার এ ধারণা পাওয়া গেছে।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) অন্যতম সদস্যদেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনের সময় গাম্বিয়াকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ।

আইসিজের শুনানির সময় উপস্থিত বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে গাম্বিয়ার আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ১১ ডিসেম্বর বেশ কিছু সময় আলোচনা করেছিলেন। বিশেষ করে গাম্বিয়ার আইনজীবীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়।

এ নিয়ে জানতে চাইলে দ্য হেগ থেকে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাম্বিয়ার আইনজীবীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের সৃষ্টি, তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জানিয়েছি। রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষাবিষয়ক ওআইসির অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা কমিটির অন্যতম সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এ দায়িত্ব পালন করেছে।’ তিনি জানান, তিন দশক ধরে বাংলাদেশ কীভাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে, সেটি তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত কী করেছে আর মিয়ানমারের ভূমিকা কী, সেটাও বলা হয়েছে। বাংলাদেশ খুব স্পষ্ট করেই জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংসতা হয়েছে, তার বিচার এবং রাখাইনের সহায়ক পরিবেশ প্রত্যাবাসনের জন্য জরুরি। এই দুটি বিষয়ে উন্নতি হলেই রোহিঙ্গারা তাদের আদি নিবাসে ফিরে যেতে উৎসাহিত হবে।

প্রসঙ্গত, শুনানির সময় মিয়ানমারের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আলোচনা চলছে। এতে অগ্রগতিও আছে। কাজেই অন্তর্বর্তীকালীন কোনো পদক্ষেপ নিলে সমস্যা দীর্ঘায়িত হবে। রাখাইনের পরিস্থিতির অবনতি হবে। মিয়ানমারের আইনজীবীদের জবাবে গাম্বিয়ার আইনজীবী বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের বক্তব্য প্রতারণামূলক।

আইসিজের শুনানিতে রোহিঙ্গা গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের প্রধান অং সান সু চি

নেদারল্যান্ডসের একটি কূটনৈতিক সূত্র এই প্রতিবেদককে জানায়, গত বুধবার দ্য হেগে স্থানীয় কানাডা হাইকমিশন এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে রাখাইনে নির্যাতিত হওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা আমন্ত্রিত অতিথিদের জানিয়েছেন, মিয়ানমারে তাঁদের ওপর কীভাবে নৃশংসতা চালানো হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক মন্তব্য করেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার জবাবদিহি সাংঘর্ষিক নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনায় বাংলাদেশ কখনো জবাবদিহির প্রসঙ্গ তোলেনি। বাংলাদেশ ইচ্ছা করেই বিষয়টি আলাদা করে রেখেছে বলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের মতো বহুপক্ষীয় ফোরামে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিধন চলেছে তা তুলেছেন। তাই আজ রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার বিষয়টি দ্য হেগে এসেছে।

মাসখানেকের মধ্যে আইসিজের অন্তর্বর্তী নির্দেশনা আসতে পারে। এরপর মাস দু-একের মধ্যে নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে মূল মামলার শুনানি শুরু হয়ে যেতে পারে

কী ঘটতে পারে
গত বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে আইসিজে জানিয়েছেন, যথাযথ সময়ে একটি বৈঠকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের নির্দেশনার আবেদনের বিষয়ে আইসিজে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
গত তিন দিন আইসিজেতে শুনানির সময় উপস্থিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা গাম্বিয়ার আইনজীবীদের পাশাপাশি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মামলার গতি প্রক্রিয়া সম্পর্কে আইন বিশেষজ্ঞ ও আইসিজে কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণ শুনেছেন। তাঁদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের একাধিক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে জানান, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়া ছয়টি অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়েছে। তবে এর সব পাওয়া যাবে কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে রাখাইনের গণহত্যা নিয়ে মিয়ানমারের বক্তব্য যে স্ববিরোধী, সেটা সবার কাছে স্পষ্ট। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের ব্যাপারে আদালত খুব বেশি সময় নেবেন না।
কত সময়ের মধ্যে ওই পদক্ষেপের নির্দেশ আসবে আর মূল মামলা কবে নাগাদ শুরু হতে পারে—জানতে চাইলে তাঁরা জানান, মাসখানেকের মধ্যে আদালতের নির্দেশনা আসার ইঙ্গিত আছে। এরপর মাস দু-একের মধ্যে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে মূল মামলার শুনানি শুরু হয়ে যেতে পারে।

আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, গণহত্যার দায় থেকে বাঁচার জন্য মিয়ানমার এটা-সেটা বলে প্রকারান্তরে অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। কারণ, কোনো অঞ্চলের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বিতাড়ন যে জাতিগত নিধন, এটা তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাঁর মতে, গণহত্যা হয়েছে বলে আদালত রায় দিলে তা হবে বিরাট বিজয়। কারণ, এর ফলে রোহিঙ্গাদের পাশে যারা আছে, তাদের মনোবল জোরালো হবে। উল্টো দিকে এখন যারা মিয়ানমারকে সমর্থন করে যাচ্ছে, তাদের পক্ষে দেশটির পাশে থাকা দুরূহ হয়ে পড়বে।

আরও পড়ুন: