Thank you for trying Sticky AMP!!

নটর ডেমের ছাত্র নিহত: গাড়িটির আসল চালক কে

নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান নিহতের ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার সড়কে নেমে আসেন বিভিন্ন স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা

নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িটি বরাদ্দ ছিল চালক ইরান মিয়ার নামে। কিন্তু তিনি অবৈধভাবে গাড়িটি চালাতে দেন হারুন মিয়া নামের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে। হারুন মিয়া এই গাড়ি চালাতে অংশীজন হিসেবে নিয়েছেন সংস্থার আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবদুর রাজ্জাককে। এ ছাড়া করপোরেশনের বাইরের শ্রমিক হিসেবে রাসেল খান নামের এক যুবককে দিয়েও গাড়িটি চালানো হতো।

গত বুধবার দুপুরে গুলিস্তান এলাকায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানকে যখন চাপা দেওয়া হয়, তখন চালকের আসনে ছিলেন না মূল চালক ইরান মিয়া। পুলিশের দাবি, তখন গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রাসেল খান। রাসেল খানকে চালকের আসনে বসিয়েছেন হারুন মিয়া।

তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধান বলছে, নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়ার সময় গাড়িতে চালকের আসনে ছিলেন হারুন মিয়া। এই দুর্ঘটনার পর হারুন মিয়া ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় চলে যান। তার ঘণ্টাখানেক পর সিটি করপোরেশনে এসে এক কর্মকর্তার কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন।

ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়ার পর মুঠোফোনে তাঁকে ঘটনা জানিয়েছেন হারুন মিয়া। তখন এই কর্মকর্তা জানতে চান, গাড়ি কোথায়? পরে তাঁকে জানানো হয় ঘটনাস্থলেই গাড়ি রেখে তিনি পালিয়েছেন।

নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান নিহতের ঘটনায় গাড়িচালক হিসেবে শুক্রবার হারুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বলা হচ্ছে, হারুন ওই গাড়ির মূল চালক। এর আগে রাসেল খান নামে একজনকে গ্রেপ্তারের পর বলা হয়েছিল, তিনি গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তবে ওই গাড়ির চালক হিসেবে আরও তিনজনের নাম এসেছে, তাঁরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন

মুঠোফোনে আলাপের প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে নগর ভবনে এই কর্মকর্তার কক্ষে আসেন হারুন মিয়া। হারুন মিয়া যখন এই কর্মকর্তার কক্ষে আসেন, তখন খুব ভীত ছিলেন। কথাই বলতে পারছিলেন না। এ সময় হারুন মিয়া বলেন, ‘স্যার, আমার শরীর কাঁপছে, কথা বলতে পারছি না। আমি একটু পানি খেয়ে আসি।’ সিটি করপোরেশনের ওই কর্মকর্তা বলেন, তার আগে হারুন মিয়াকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ঘটনা কীভাবে ঘটেছে। তিনি তখন ঘটনার বর্ণনা দেন। তবে পানি খাওয়ার কথা বলে কক্ষ থেকে বেরিয়ে হারুন মিয়া আর ওই কক্ষে যাননি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

আরেকটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, গাড়িতে রাসেলসহ বাইরের তিনজন শ্রমিক ছিলেন। বাকি দুজন হলেন রব্বানী ও বিল্লাল। এই তিনজন সিটি করপোরেশনের স্থায়ী ও অস্থায়ী কোনো কর্মী নন। দক্ষিণ সিটি করপোরশেনের ভারী যানবাহনগুলোতে বহিরাগত এমন লোকদের কাজের জন্য রাখা হয়। আবার নিয়ম ভঙ্গ করে বহিরাগতদের হাতেও গাড়ির স্টিয়ারিং দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

Also Read: ‘আহ! আমার পাখিটা বিদায় দিলাম, চিরবিদায় হয়ে গেল’

দক্ষিণ সিটির আওতাধীন গাড়ির বরাদ্দ ও চালক ঠিক করার কাজটি করে সংস্থাটির পরিবহন বিভাগ। ঘটনার দিনই পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেছিলেন, হারুন মিয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তখন অবশ্য হারুন মিয়ার নাম বলতে গিয়ে হারুন অর রশিদ বলেছিলেন তিনি।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটির ময়লার গাড়ির মূল চালক হারুন অর রশিদকে (হারুন মিয়া) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাব-৩-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের ওই গাড়িটি হারুন অর রশিদের নামে বরাদ্দ ছিল। তবে ঘটনার সময় তিনি গাড়িটি চালাচ্ছিলেন না। তাঁকে পল্টন থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবৈধভাবে গাড়িটির বরাদ্দ নিয়েছেন হারুন মিয়া। এই গাড়ির মূল চালক (ভারী) ইরান মিয়া।

নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া গাড়িটি বদলি চালক হিসেবে যে তিনজন চালাতেন, তাঁদের কারও ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নেই। দক্ষিণ সিটির ময়লাবাহী গাড়িগুলো যাঁদের দিয়ে চালানো হচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগই হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী, না হয় মশককর্মী, নিরাপত্তাপ্রহরী বা অন্য পদে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে করপোরেশনে কাজ করছেন।

Also Read: নটর ডেমের ছাত্র নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ