Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন ভোটার ও বস্তির ভোটে চোখ প্রার্থীদের

প্রচারণার একেবারে শেষ দিকে এসে মেয়র পদপ্রার্থীরা ছুটছেন বস্তিতে। বরিশাল শহরের বিভিন্ন এলাকায় মোট ৩৫টি বস্তি রয়েছে। এসব বস্তিতে ভোটার রয়েছেন ৩৩ হাজার। বস্তিবাসীর ভোট কার পক্ষে যাবে, এ নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। পাশাপাশি নতুন ভোটারদেরও কাছে টানার চেষ্টা করছেন মেয়র প্রার্থীরা। এবার নতুন ভোটার ৩০ হাজার ৯০৯ জন। বরিশাল সিটি নির্বাচনে মোট ভোটারের এক-চতুর্থাংশই নতুন এবং বস্তিতে বসবাসকারী।

এই দুই শ্রেণির ভোটার মেয়র পদে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে এবার বড় ভূমিকা রাখবে বলে ভাবা হচ্ছে। তাই তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এবং বস্তিবাসীর উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বিভিন্ন দলের মেয়র প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে হালনাগাদ করা ভোটার তালিকা অনুযায়ী বরিশাল সিটি করপোরেশনের মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছেন ৩০ হাজার ৯০৯ জন। তাঁদের মধ্যে নারী ভোটার ১৭ হাজার ৯৮ জন এবং পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৮১১ জন। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলই প্রত্যাশা করছে, নতুন ভোটারদের বড় অংশ তাদের দিকে ঝুঁকবে।

গত তিন দিনে শহরের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাতটি বস্তিতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। বস্তিতে থাকা ভোটাররা বলেছেন, নির্বাচনের সময় তাঁদের গুরুত্ব বাড়ে। ভোট শেষে তাঁদের উন্নয়নের জন্য কোনো কাজ হয় না। এবারও প্রার্থীরা তাঁদের কাছে আসছেন। নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ এবং নিম্ন আয়ের মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। নির্বাচিত হলে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ইপিজেড স্থাপন এবং নিম্ন আয়ের লোকজনের জন্য পৃথক আবাসন ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ কোনো ইশতেহার ঘোষণা করেননি। তবে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের সময় তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে বস্তিবাসীর উন্নয়নেও কাজ করার কথা বলছেন।

গত তিন দিনে ১০ জন তরুণ ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। বেশির ভাগ তরুণ মনে করেন, গত ৫ বছরে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় পর্যাপ্ত উন্নয়ন হয়নি। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন করতে পারবেন এমন প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি অন্য দলের মেয়র প্রার্থীরাও বস্তির মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এবার বরিশাল সিটি নির্বাচনে তরুণ ভোটার এবং বস্তিবাসী ভোটার বড় ভূমিকা রাখবে। তাই সব প্রার্থী ইশতেহারে এবং গণসংযোগে এই দুই শ্রেণির ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নে নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান।

বাসদের মেয়র প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী তাঁর ১৪ দফা ইশতেহারে তরুণ ও সুবিধাবঞ্চিত বাসিন্দাদের উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় ২০১৫ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শহরের বস্তিগুলোতে জরিপ চালানো হয়। ওই জরিপ অনুযায়ী, শহরের ৩৫টি বস্তিতে তখন ৫০ হাজার মানুষ বাস করত।

গত তিন বছরে বরিশালে বস্তির সংখ্যা না বাড়লেও বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। বরিশাল নগর ভবনের কাছেই রসুলপুর বস্তিতে থাকে প্রায় দুই হাজার মানুষ। এখানকার বাসিন্দারা ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাও পায়নি। প্রায় ১৬ বছর আগে বরিশাল সিটি করপোরেশন হলেও শহরের কোনো বস্তির চিত্র বদলায়নি।

বরিশাল শহরের দক্ষিণ পলাশপুর বস্তির বাসিন্দা আফজাল মিয়া বলেন, বস্তিতে যাওয়ার রাস্তা ভালো না। বিদ্যুৎ-গ্যাসের বৈধ সংযোগ নেই। পানির লাইন নেই। যিনি মেয়র নির্বাচিত হবেন তাঁর কাছ থেকে এসব সুবিধা চান তাঁরা।