Thank you for trying Sticky AMP!!

নাগরিকের চলাফেরার নিয়ন্ত্রণ অসাংবিধানিক: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট

নাগরিকের চলাফেরা সাংবিধানিক অধিকার। কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়ালখুশি অনুযায়ী তা নিয়ন্ত্রণ বা বারণ করা অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট।

বিদেশ যেতে বাধা পেয়ে এর বৈধতা নিয়ে এক ব্যক্তির করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রায়ে উচ্চ আদালত এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৬ মার্চ ওই রায় ঘোষণা করেন। ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

রায়ে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে যে অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে যেকোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারণ করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন করা। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ধরনের আইন বা বিধি প্রণয়ন করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতের কাছে এ ধরনের বারিত আদেশ প্রার্থনা করা এবং আদালতের অনুমতি নেওয়া।

দেশত্যাগ বিষয়ে আবেদন ও আদেশ

পূর্ণাঙ্গ রায়ে আরও বলা হয়, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রতিনিধির মাধ্যমে এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে আবেদন জানালে আদালত সন্তুষ্টি সাপেক্ষে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যার মেয়াদ ৬০ দিনের অধিক হবে না বারিত আদেশ কিংবা স্বীয় বিবেচনায় ন্যায়সংগত কোনো আদেশ প্রদান করতে পারবে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পক্ষ ওই আদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন জানাতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং কাগজপত্র, যদি দাখিল করা হয় পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করতে পারবেন। বারিত আদেশের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ পুনরায় সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করতে পারবেন। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষ যদি কাগজপত্র দাখিল করে, তা বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ আদেশ প্রদান করবেন।

অনুসন্ধান বা তদন্ত কিছুটা সময়সাপেক্ষ

রায়ে আদালত বলেছেন, এটি বাস্তবতা যে দুর্নীতি কিংবা মানি লন্ডারিংসংক্রান্ত মামলাগুলো অনুসন্ধান বা তদন্ত কিছুটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যদিও সংশ্লিষ্ট বিধিতে অনুসন্ধান বা তদন্তের সময়সীমা নির্ধারিত আছে। আদালত বলেন, ‘আমাদের বিচারিক অভিজ্ঞতা বলে যে কমিশন কিংবা অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম আইন বা বিধিতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারে না।’

রায়ে আরও বলা হয়, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে দেশ ত্যাগ করেছে এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের আর আইন-আদালতের সম্মুখীন করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব বাস্তবতা আমলে নিয়ে দুর্নীতি এমনকি অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রেও অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারিত বা তাঁর চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা সময়ের চাহিদাও বটে। সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধির অনুপস্থিতিতে কোনো তদন্ত সংস্থার দাপ্তরিক আদেশ দিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ বা কার্যধারা গ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী।

রায়ের অভিমতে আদালত বলেছেন, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারও ওপর এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ সংবিধান ও মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ, তাই এর সময়সীমা নির্দিষ্ট করাও ন্যায়সংগত হবে।

বিদেশ যেতে বাধা পেয়ে রিট

নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর দুদক এক চিঠিতে নরসিংদীর মো. আতাউর রহমান যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে ইমিগ্রেশন পুলিশ সুপার (এয়ারপোর্ট) বরাবর চিঠি দেয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ব্যবসায়ী আতাউর রহমান ওই রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দেন।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও মো. আদনান সরকার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক।

রিটকারী আতাউর রহমানের বিষয়ে রায়ে বলা হয়, বিদেশ যেতে চাইলে তিনি কোন দেশে যাবেন, সেখানে অবস্থানকালীন ঠিকানা, মোবাইল ফোন ও ই-মেইল আইডি কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। কমিশন প্রয়োজন মনে করলে অনুসন্ধানের স্বার্থে ই-মেইল ও মোবাইল ফোনে বার্তা দিয়ে যুক্তিসংগত সময় দিয়ে আসামিকে অনুসন্ধান বা তদন্তের স্বার্থে কমিশনের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে অবশ্যই কমিশনের সামনে উপস্থিত হতে হবে।

উল্লেখ্য, সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধি প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন কাউকে বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা দিতে সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি নিতে হবে বলে হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায় স্থগিত চেয়ে দুদক আবেদন করে। ২৮ মার্চ আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত কোনো স্থগিতাদেশ না দিয়ে দুদকের করা আবেদন ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।