Thank you for trying Sticky AMP!!

নালার ওপরে স্থাপনা

সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য অ্যাকোয়ারিয়াম বসাতে সড়কের পাশে নালার ওপর স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় নগরের জামালখানের পিডিবি কলোনির সামনে। জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল ও নালা-নর্দমা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কিছুদিন ধরে তোড়জোড় চলছে। এর মধ্যেই নগরের জামালখান এলাকায় নালার ওপর স্থাপনা নির্মাণ করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর। এসব স্থাপনায় অ্যাকোয়ারিয়াম আর দোকান থাকবে।

সিটি করপোরেশনের জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ এসব স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে। তিনি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি। নগরের নালা–নর্দমা ও খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও অবৈধ দখলমুক্ত রাখার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের।

চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকার পিডিবি কলোনির সামনের নালায় এখন স্থাপনার নির্মাণকাজ চলছে। আগে নালাটি উন্মুক্ত ছিল। সম্প্রতি সেখানে নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে স্ল্যাব বসানো হয়। পরে পিলার (খুঁটি) দেওয়া হয়েছে।

নালায় স্থাপনা নির্মাণ কোনোভাবেই উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলীরা। তাঁদের মতে, সবার আগে জলাবদ্ধতার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ সৃষ্টি হলে সে সৌন্দর্যবর্ধন দিয়ে কী লাভ? ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগেও। তবে এলাকাবাসীর বিনোদনের জন্য অ্যাকোয়ারিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। নগর পরিকল্পনা শাখার অধীনে এই কাজ হচ্ছে। যারা কাজ করছে তারাই এর জবাবদিহি করবে।’

সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ এই কাজ করছেন। তা করপোরেশনের ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের’ অনুমোদন নিয়ে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেখানে একটি বাণিজ্যিক স্টল থাকবে। এই স্টল না থাকলে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আসবে কোথা থেকে?

নালা পরিষ্কারের ব্যবস্থা রেখেই স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন এ কে এম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ওখানে যত বড় ফুটপাত আছে, তত বড় ফুটপাতের দরকার নেই। নালা উন্মুক্ত রাখলে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবে লোকজন।

গতকাল সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, নালার ওপর স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এর ওপর ইটের খোয়া ও বালু রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর বসার আসন আছে। এর মধ্যে একটি অংশে নালার ওপর ছয়টি খুঁটি দিয়ে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। আরেকটি অংশে স্থাপনার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করা হচ্ছে। গতকাল সেখানে কোনো শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ দাবি করেন, এলাকার মানুষের বিনোদন ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য অ্যাকোয়ারিয়াম নির্মাণ করছেন। দুটি অ্যাকোয়ারিয়ামে বিভিন্ন ধরনের মাছ থাকবে। এ জন্য সাত ফুট নালার প্রশস্ততা মাত্র দুই ফুট কমিয়ে এই স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। নালাটিতে তেমন কোনো পানির প্রবাহ নেই। তারপরও পানিপ্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষ বিনা ফিতেই এসব অ্যাকোয়ারিয়াম দেখতে পারবেন।

জানা গেছে, দুটি স্থাপনার মধ্যে একটিতে অ্যাকোয়ারিয়াম স্থাপন করা হবে। ৪০ বর্গফুট আয়তনের স্থাপনাটিতে দুটি অ্যাকোয়ারিয়াম থাকবে। আর অন্য স্থাপনায় অ্যাকোয়ারিয়ামের যন্ত্রপাতিগুলো রাখা হবে। পরে দোকান নির্মাণ করা হবে।

‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঈদের পরেই খালগুলোর ওপর থেকে সব অবৈধ স্থাপনা শুরু করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্পের পরিচালক ও সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী প্রথম আলোকে বলেন, জামালখানের পিডিবি কলোনির সামনের নালার ওপর যদি স্থাপনা করা হয়, তা উচ্ছেদ করা হবে। বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ প্রথম আলোকে বলেন, এই ধরনের ছোট ছোট অপরিকল্পিত স্থাপনাগুলোর কারণে নগরের বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। জামালখান উঁচু এলাকা বলে হয়তো সেখানে পানি জমে জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্তু এর নিচের এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা হবে। আর নালার ওপর কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা খুবই অন্যায়। এটি ঠিক না। এই অনাচার বন্ধ করতে হবে।