Thank you for trying Sticky AMP!!

শয়ে শয়ে গ্রেপ্তারের কারণ কী?

ঢাকার আদালতে ইয়ারুন বিবি ছবি: আসাদুজ্জামান

বৃদ্ধ ইয়ারুন বেগম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রধান ফটকের কাছে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চুপচাপ বসে ছিলেন। বেলা দুইটার দিকে ইয়ারুন বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নাতি নাসির কোনো রাজনীতি করেন না। তেজগাঁও থানার পুলিশ তাঁকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। থানায় গেলেও নাতির সঙ্গে দেখা হয়নি। এ জন্য আদালতে এসেছেন দেখা করতে।


ঢাকার আদালতে গতকাল বুধবার ৪৩১ জনকে হাজির করা হয়। গত মঙ্গলবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার আদালত ও পুলিশ সূত্র বলছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোসহ নাশকতা ঘটানো এবং নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ৪৩টি মামলায় গ্রেপ্তার ৪৩৪ আসামির মধ্যে প্রায় ৩০০ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালত পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া এসব ব্যক্তির মধ্যে ইয়ারুন বেগমের নাতি নাসিরও রয়েছেন।

রিমান্ড আবেদন না থাকায় নাসিরকে আর আদালতের হাজতখানা থেকে আদালতের এজলাস কক্ষে তোলা হয়নি। নাসিরের দেখা পাননি নানি ইয়ারুন। সন্ধ্যার আগে ইয়ারুন সজল চোখে বলেন, বিনা দোষে নাসিরকে ধরা হয়েছে।

অবশ্য মামলার কাগজপত্র বলছে, নাসিরকে তেজগাঁও থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই মামলায় গ্রেপ্তার ৪১ জনকে ঢাকার আদালতে হাজির করার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, গ্রেপ্তার করা আসামিরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলে বাধা দিয়েছেন, গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার জন্য তাঁরা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত।

গ্রেপ্তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার সিএমএম আদালতে এসেছেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নীপা বেগম। ছবি: আসাদুজ্জামান

গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আইনজীবীরা আদালতে দেওয়া আরজিতে উল্লেখ করেন, হয়রানি করার জন্য নিরীহ লোকদের ধরে এনেছে পুলিশ। নাশকতার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন।

ঢাকার আদালতে দেখা যায়, দুপুর ১২টার পর থেকে গ্রেপ্তার আসামিদের আত্মীয়স্বজন আদালতে ভিড় করতে শুরু করেন। প্রিজনভ্যানে করে যখন আসামিদের আদালতের সামনে দিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন স্বজনেরা আসামিদের দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পারভেজ থাকেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। শ্যামপুর এলাকার একটি কারখানায় কাজ করেন তিনি। মঙ্গলবার পারভেজ শ্যামপুর থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

স্বামীকে একনজর দেখার জন্য ঢাকার আদালতে দুপুরের দিকে আসেন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা নীপা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে, তাঁর স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। শ্যামপুরের একটি ডেকোরেটর দোকানে চাকরি করেন। রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে।

একই থানায় গ্রেপ্তার হায়াতের স্ত্রী জাহানারা বেগম স্বামীকে দেখার জন্য আদালতে আসেন। তিনি বলেন, গরিব মানুষ। স্বামীর আয়ে সংসার চলে। কোনো রাজনীতি করেন না। রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে।

নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের আত্মীয়স্বজন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কোনো রাজনীতির সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। বিভিন্ন পেশায় জড়িত।

গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের একজনের আইনজীবী আরফান উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হয়রানি করার জন্য পুলিশ নিরীহ মানুষদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করছে। এগুলো অন্যায়, ঠিক না।’