Thank you for trying Sticky AMP!!

নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় আবারও অপেক্ষায়

মতিউর রহমান নিজামী

জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আবারও অপেক্ষায় থাকল। গতকাল সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো এ মামলার রায় অপেক্ষমাণ রেখেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। যেকোনো দিন এ রায় ঘোষণা করা হবে।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর এ মামলার কার্যক্রম শেষে প্রথমবারের মতো রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়। কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল দ্বিতীয় দফায় মামলার সমাপনী যুক্তি শুনে রায় অপেক্ষমাণ রাখলেন।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত (এক সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন) ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের পাল্টাপাল্টি যুক্তি খণ্ডনের মধ্য দিয়ে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি দেন কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী ও মোহাম্মদ আলী। তাঁরা নিজামীর সর্বোচ্চ সাজার আরজি জানিয়ে বলেন, নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে চারটি গণহত্যার। এর মধ্যে একটি বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
নিজামীকে খালাসের আরজি জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, আসামির বিরুদ্ধে আনা একটি অভিযোগও রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড গণহত্যা হবে এ নিয়ে আসামিপক্ষের দ্বিমত নেই। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজামীর সংশ্লিষ্টতা দেখাতে হবে। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ আনেনি।
যুক্তি উপস্থাপন শেষে দুই পক্ষকেই ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, রায় প্রস্তুত করে ঘোষণার দিন ধার্য করা হবে। তত দিন পর্যন্ত সিএভি (কেস অ্যায়োটিং ভারডিক্ট) থাকবে। সমাপনী যুক্তিসংক্রান্ত লিখিত কিছু থাকলে তা জমা দেওয়ার জন্য দুই পক্ষকেই ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত সময় দেন ট্রাইব্যুনাল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে নিজামীর বিরুদ্ধে মামলাটির বিচার। ২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। একই দিনে ট্রাইব্যুনাল-২-এ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার বিচার শুরু হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ওই মামলার আপিল নিষ্পত্তি ও রায় কার্যকর হয়ে গেছে।
মামলাটির দীর্ঘসূত্রতার কয়েকটি কারণও রয়েছে। এ মামলায় ১৭ মাস ধরে ৩০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। নিজামী ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলারও আসামি হওয়ায় গত বছর ওই মামলার জন্য তাঁকে সপ্তাহে দুই দিন চট্টগ্রামে নেওয়া হতো। ওই মামলায় তাঁর দণ্ড হয়েছে। ১৩ নভেম্বর প্রথম দফায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটির রায় অপেক্ষমাণ রাখা হলেও ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন চলে। রায় ঘোষণার আগেই ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেন ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর। ২৩ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ১০ মার্চ থেকে দ্বিতীয় দফায় সমাপনী যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়, শেষ হয় গতকাল। নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন প্রভৃতিসহ ১৬ অভিযোগ রয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার রায় দিয়েছেন। তিনটি মামলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
১৯৪৩ সালে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী নিজামী একাত্তরে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন যার নাম বর্তমানে ইসলামী ছাত্রশিবির) সভাপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, তিনি একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক বাহিনী আলবদরের প্রধান ছিলেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।