Thank you for trying Sticky AMP!!

নিম্নমানের ধান কিনতে চাপ

নান্দাইলের খাদ্যগুদাম চত্বরের চারপাশ ধানের বস্তা দিয়ে ভরে ফেলা হয়েছে। তবে এসব ধানের মালিক পাওয়া যায়নি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায়। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পোকায় খাওয়াসহ নিম্নমানের ধান কেনার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ সরকারদলীয় কিছু নেতার বিরুদ্ধে। তাঁরা খাদ্যগুদামে গিয়ে হম্বিতম্বি করা থেকে শুরু করে গত শনিবার রাতে খাদ্য বিভাগের এক কর্মচারীকে জনসমক্ষে লাঞ্ছিতও করেছেন। স্থানীয় সাংসদ গতকাল রোববার দুপুরে খাদ্যগুদামে গিয়ে সরকারি কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি মিটমাট করে দেন।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে এ প্রতিবেদক নান্দাইল পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত খাদ্য বিভাগের ধান ক্রয় কেন্দ্রে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত দপ্তরটির ভেতরে লোকারণ্য ও দপ্তরের আঙিনায় শত শত ধানের বস্তা স্তূপ করে রাখা। প্রতিটি স্তূপ পলিথিন দিয়ে ঢাকা। তবে বেশির ভাগ স্তূপের মালিকদের সেখানে পাওয়া যায়নি।

এ সময় কয়েকজন কৃষক জানান, ধানের আর্দ্রতা পরীক্ষা করার পর তাঁদের ধান গুদামে ঢোকানোর অনুমতি (সিরিয়াল) দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা গুদামে ধান দিয়েছেন। কিন্তু এদিন তাঁদের ধান কেনা হয়নি। শনিবার দুপুরে বৃষ্টিতে তাঁদের ধান ভিজে গেছে। এখন নির্ধারিত আর্দ্রতা ফিরে পাওয়ার জন্য কোনো কোনো কৃষক গুদামের আঙিনায় রেখে ভেজা ধান রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন।

কৃষকদের অভিযোগ, তাঁদের ধান যেভাবে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতাদের ধান ততটা পরীক্ষা ছাড়াই গুদামে ঢোকানো হচ্ছে। কৃষকদের জন্য সিরিয়াল প্রথা, কিন্তু নেতাদের জন্য কিছুই লাগছে না কেন, প্রশ্ন তাঁদের।

খাদ্যগুদামের সামনে কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, শনিবার রাতে গুদামের ফটকে অনেকগুলো মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে রেখে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। সে সময় খাদ্য কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। যাঁরা এটা করেছেন, তাঁরা সাংসদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মো. আলাল উদ্দিন বলেন, পোকায় খাওয়াসহ নিম্নমানের ধান কেনার জন্য তাঁর ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) পরিচয় দিয়ে পোকায় খাওয়া ধান জোর করে তাঁর কার্যালয়ের বারান্দায় রেখে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করানো হচ্ছে তা কেনার জন্য। নানা জায়গা থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভীতি প্রদর্শনের জন্য কর্মচারীকে প্রকাশ্য রাস্তায় লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ইউএনও মো. আবদুর রহিম সুজন খাদ্যগুদামে ঢুকে আঙিনাজুড়ে ধানের স্তূপ দেখে হতবাক হন। তিনি এসব ধান গুদাম থেকে সরিয়ে নিতে মালিকদের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ না মানলে ধান জব্দ করে নিলামে বিক্রি করা হবে বলে জানান। এ সময় মো. আবদুল হাকিম, মো. শামীমসহ ১০-১২ জন কৃষক ইউএনওকে বলেন, তাঁদের ধান কেনার জন্য সিরিয়াল দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ধান গুদামের ভেতর ঢুকিয়েছেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল্লা ফারুক একটি খাতা দেখিয়ে বলেন, ‘আমরা ধানের আর্দ্রতা পরীক্ষার সিরিয়াল করছি। যে কৃষকের ধান আর্দ্রতার মান উত্তীর্ণ হয়েছে, তাঁদেরটা আমরা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধান কেনার কাজটি সারতে হয়।’

এ সময় খাদ্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কয়েকজন কৃষককে বলতে শোনা যায়, সরকারি দলের নেতাদের ধান কেনার সময় এসব যুক্তি বা নিয়ম কোথায় থাকে। এসব নিয়ম কি শুধু কৃষকদের জন্য?

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলার সময় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে খাদ্যগুদামে ঢোকেন ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আবেদীন খান। সাংসদকে কাছে পেয়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁদের নানাবিধ সমস্যা ও কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তুলে ধরেন। এসব শোনার পর সাংসদ বলেন, সরকারিভাবে যেসব নির্দেশনা দেওয়া আছে, তা মেনে ধান কিনতে হবে। এরপরও তাঁর নাম ভাঙিয়ে কেউ কোনো বাড়তি সুবিধা নিতে চাইলে তাঁকে (সাংসদ) যেন জানানো হয়। এ সময় তিনি লাঞ্ছিত কর্মচারী সাইফুল ইসলামকে ডেকে ঘটনাটি মীমাংসা করে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন লটারির মাধ্যমে কৃষকদের তালিকা করে সেই তালিকা প্রকাশ্য স্থানে টাঙিয়ে দেয়। সেখানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সরকারিভাবে ধান কেনা অভিযান শেষ হয়। কিন্তু নান্দাইলের কৃষকদের জন্য কোনো তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি।

এ বিষয়ে ইউএনও আবদুর রহিম সুজন দাবি করেন, নান্দাইলে নির্ধারিত সময়ের পর ধান কেনার নির্দেশনার চিঠি আসে। তাই যথাসময়ে কৃষকদের তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। ধান কেনার বিষয়টি কৃষকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।