Thank you for trying Sticky AMP!!

‘নিষিদ্ধ’ বার্তার উৎস শনাক্ত করে দেওয়ার বিধান থাকছে

ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে প্রবিধানের খসড়ায় কিছু পরিবর্তন এনে আদালতে জমা দিয়েছে বিটিআরসি।

ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) যে প্রবিধানমালার খসড়া করেছিল, সেখানে কিছু সংশোধন করা হয়েছে। নতুন খসড়ায় ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের কিছু বিষয়ে শিথিলতা আনা হয়েছে। অবশ্য কিছু বিধান নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত নতুন খসড়ায়ও রয়ে গেছে।

যেমন বিটিআরসির প্রবিধানের আগের খসড়ায় বলা হয়েছিল, বিধি লঙ্ঘনকারী কোনো বার্তা আদান-প্রদান করলে আদালত ও বিটিআরসির নির্দেশ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট বার্তা প্রথম যিনি দিয়েছিলেন, তাঁকে শনাক্ত করে দিতে হবে। প্রথম ব্যক্তি যদি দেশের বাইরে অবস্থান করেন, তবে দেশে যিনি অবস্থান করবেন, তিনি ‘প্রথম’ বলে গণ্য হবেন।

বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, এটা প্রবিধানে পরিণত হলে ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির গোপনীয়তা বলে কিছু থাকবে না।

বিটিআরসি আদালতের নির্দেশে ‘বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল অ্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মস, ২০২১’ শিরোনামে প্রবিধানমালার খসড়া তৈরি করে অংশীজনদের মতামত নিতে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এরপর খসড়া প্রবিধানমালার কিছু বিধান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন তাদের উদ্বেগের কথা জানায়।

বিটিআরসি ১৩ জুন প্রবিধানমালার খসড়ায় কিছু পরিবর্তন করে এনে সেটি হাইকোর্টে জমা দিয়েছে। আদালত সেদিন চূড়ান্ত নীতিমালার বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে অগ্রগতি জানাতে বিটিআরসিকে বলেন এবং এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ ১৯ অক্টোবর দেওয়া হবে বলে আদালত উল্লেখ করেন।

খসড়াটিতে নতুন করে কোনো সংশোধনী আনা হবে কি না অথবা মতামত প্রদানের সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র প্রথম আলোকে বলেন, আদালত যেভাবে আদেশ দেবেন, সেভাবেই হবে।

নতুন খসড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়েছে। প্রথম খসড়ায় তাদের জন্য আবাসিক কর্মকর্তা নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছিল। নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘কান্ট্রি সাপোর্ট টিম’ নিয়োগ দেবে। এ ছাড়া সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিটিআরসির সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা সমন্বয়ের জন্য তাদের একজন ‘ফোকাল পয়েন্ট’ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। এই কর্মকর্তারা অনাবাসিক হতে পারবেন। তবে বাংলাদেশে তাদের একটি কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

নতুন খসড়ায় আরও বলা হয়, ‘কমিউনিটি গাইডলাইনে’ যেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি, স্পর্শকাতর বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়।

নতুন খসড়ায় সাইবার নিরাপত্তা কার্যক্রম, পরিচয় যাচাই, অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ সংক্রান্ত তদন্ত বা বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি গোপনে আদান-প্রদান করা বার্তার প্রেরকের পরিচয় শনাক্ত করে দেওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভ (জিএনআই) গত মার্চে বিটিআরসিকে দেওয়া এক চিঠিতে এ বিষয়ে বলেছিল, পরিচয় শনাক্ত করে দিতে কোম্পানিগুলোকে এনক্রিপশন (গোপনীয়তা) ভাঙতে হবে এবং ব্যবহারকারীর বার্তা সরকারের নজরদারি সংস্থার কাছে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে।

খসড়া প্রবিধানমালায় নিষিদ্ধ আধেয় প্রকাশ হলে বিটিআরসিকে তা ‘ব্লক’ বা প্রচার বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যে বিষয়ে উদ্বেগ ছিল, সেগুলো থেকে গেলে গঠনমূলক সমালোচনা বন্ধ হবে। তিনি বলেন, সবাই এখন ডিজিটাল মাধ্যমনির্ভর। এখানে অনেক ঝুঁকি আছে। কিন্তু মাথাব্যথার জন্য যদি গলা কেটে ফেলতে হয়, তবে সেটা সমাধান নয়।