Thank you for trying Sticky AMP!!

নীলের নীল নীল চোখ

এমন নীল চোখ সচরাচর দেখা যায় না। গুলিস্তান, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম

কয়েক দিন আগে মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনের খোলা জায়গায় প্রথম দেখা হয় শিশুটির সঙ্গে। সে কথা বলতে পারে না। শুনতেও পায় না। কিন্তু তার দুটো চোখের দিকে তাকালে যে কারও দৃষ্টি কয়েক মুহূর্ত সেখানেই আটকে থাকবে। শিশুটির চোখ নীল। নীল মানে একেবারে নীল! মলিন মুখে দুটো নীল পাথর যেন!

সেদিন অন্য একটা অনুষ্ঠানের কারণে শিশুটির ছবি তোলা হয়নি। কিন্তু মনে রেখে ছিলাম একদিন এসে ওর নীল চোখের ছবি তুলব।

নীলের হাসিমাখা মুখ। গুলিস্তান, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম

এরপর একদিন শিশুটির খোঁজে ছুটে যাই গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে। শিশুটির বর্ণনা দিয়ে অনেকের কাছে জানতে চাই চেনেন কি না? কেউ চিনল, অনেকেই চিনল না। খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া গেল না। এক শিশু জানাল, ‘ও তো নীল।’ জানতে চাইলাম, নীল এখন কোথায়? ও জানাল ওরা গ্রামের বাড়িতে গেছে। কবে ফিরবে কেউ জানে না। ওই দিনের জন্য হতাশ হলেও আশা ছাড়লাম না। প্রতিদিনই একবার নাট্যমঞ্চে যাই এবং নীলের খোঁজ করি।

নীলের মলিন মুখে দুটো নীল পাথর যেন! গুলিস্তান, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম

আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে আবারও যাই। পেলাম না। মিলন নামের এক পথশিশু জানাল, ও আমাকে নীলের কাছে নিয়ে যেতে পারবে। ও আমার মোটরসাইকেলের পেছনে উঠে বসল। বলল, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ দিকে ফটকে আছে নীল। গেলাম সেখানে। মিলন বলল, ‘আপনি দাঁড়ান আমি নীলকে নিয়ে আসি।’ রমজান মাসের প্রথম জুমা আজ, তাই ফটকের সামনে মুসল্লিদের ভিড়। অনেকক্ষণ হয়ে গেল, মিলন ফেরে না। ভাবলাম, মোটরসাইকেলে করে এ পর্যন্ত আসতে ও মিথ্যা কথা বলল না তো? নাহ, মিলন তার কথা রেখেছে, একটু পর একটি বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে ফিরে এল সে। মেয়েটির নাম মীম। ও নীলের বড় বোন। নীল কোথায় জানতে চাইলাম। মিলন জানাল, মীম কথা বলতে পারে না। ইশারায় বোঝাল নীল মহানগর নাট্যমঞ্চেই আছে। আমরা আবার আগের জায়গায় ফিরে এলাম। নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণের এক কোণে ঘুমিয়ে আছে নীল ও তাদের মা। মীম তার ভাইকে ডেকে আনল।

নীলের দুষ্টুমি। গুলিস্তান, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম

অবশেষ নীলকে ক্যামেরার সামনে পাওয়া গেল। মানুষের চোখ সমুদ্রের মতো এত নীল ও গভীর হতে পারে, নীলকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। নীলের বয়স পাঁচের বেশি হবে না। সেও বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। এই নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণেই সে থাকে তার বোন ও মার সঙ্গে। নীলের মার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানলাম তিনিও কথা বলতে পারেন না! নীলের সঙ্গে তার মায়ের চোখের মিল রয়েছে। তাঁর চোখও গাঢ় নীল। স্থানীয় ভাসমান লোকজন জানান, নীলের বাবা নীলদের খবর তেমন একটা নেন না। নীলের নাম আসলেই নীল কি না, তাও কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। চোখ দুটো নীল বলেই হয়তো এমন নাম। এখানকার অনেকেই নীলকে ভালোবাসে। নীলকে দেখে মনে হলো ওর চিকিৎসা প্রয়োজন। পুষ্টিহীন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘা দেখা দিয়েছে। তাই বলে দুষ্টুমি কমেনি। ছবি তোলার সময় তার সে কি মুখভঙ্গি!