Thank you for trying Sticky AMP!!

পদার্থের সৃজনশীল প্রশ্নও ফাঁস!

উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানের সৃজনশীল প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক।
সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে গতকাল বুধবার এই বিষয়ের পরীক্ষা হয়। কিন্তু এর আগের দিন মঙ্গলবার থেকেই পরীক্ষাটির প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। গতকাল পরীক্ষার পর একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক ফোন করে প্রথম আলোকে বলেন, মূল প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের প্রায় সবই মিলেছে।
এর আগে প্রশ্ন ফাঁসের কারণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ১০ এপ্রিল পরীক্ষাটি হওয়ার কথা ছিল। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এরই মধ্যে আবারও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠল।
সব শিক্ষা বোর্ডে সৃজনশীলের প্রশ্ন অভিন্ন হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন ছাত্র জানান, তিনি নটর ডেম কলেজের একজন পরীক্ষার্থীর গৃহশিক্ষক। তাঁর ওই ছাত্র পরীক্ষার আগের দিন ফোনে জানায় সে কিছু সাজেশন পেয়েছে, তাই তিনি যেন সেগুলোর উত্তর বলে দেন। পরীক্ষার দিন সকালে আরেকজন তাঁর কাছে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। পরীক্ষার পর দেখা যায়, এসব প্রশ্ন মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলেছে।
বুয়েটের ওই ছাত্র জানান, যাঁরা প্রশ্ন ফাঁস করেছেন, তাঁরা চালাকির আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা গেছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ও মূল প্রশ্নের মধ্যে কিছু শব্দগত পরিবর্তন ও ক্রমসংখ্যায় ওলট-পালট রয়েছে। কিন্তু বিষয়বস্তু ঠিক রয়েছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নকে সাজেশন হিসেবে চালানোর জন্য এমন কৌশল নেওয়া হতে পারে।
ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ও পরীক্ষার প্রশ্নের মধ্যে দেখা গেছে, পরীক্ষার একটি প্রশ্নের একটি অংশে বলা হয়েছে মেধাবী ছাত্র তাহিয়াত...। সেখানে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে রয়েছে মোহতাব...। আবার পরীক্ষার একটি প্রশ্নে গাড়ির ছবি ব্যবহার করা হলেও ফাঁস হওয়া প্রশ্নে তা করা হয়নি। সেখানে গাড়ির বদলে একটি বর্গক্ষেত্রের মাঝে গাড়ি লেখা রয়েছে।
একজন চিকিৎসক জানান, তাঁর একজন নিকটাত্মীয় এবার রাজধানীর সিটি কলেজ

থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরীক্ষার আগের দিন তাঁরা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পান। পরীক্ষার পর দেখা যায়, মূল প্রশ্নের সঙ্গে তা প্রায় সব মিলে গেছে। তাঁর অভিযোগ, একটি চক্র ফার্মগেট এলাকায় হাতে লেখা প্রশ্ন ফটোকপি করে বিক্রি করছে। একই সঙ্গে উত্তরও পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুর অঞ্চলের একজন শিক্ষকসহ আরও কয়েকজন একই ধরনের অভিযোগ করেন।
তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে কেউ এ ধরনের অভিযোগ করেনি। এ ছাড়া তাঁরাও কোনো সূত্র থেকে এমন কিছু পাননি যেটা মিলিয়ে দেখবেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, রাজশাহীতেও পরীক্ষার আগের দিন রাতেই শিক্ষার্থীরা মুঠোফোনের খুদে বার্তায় প্রশ্ন পায়, যা গতকাল মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলেছে।
কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেছেন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এ পর্যন্ত সাতটি পরীক্ষার মধ্যে শুধু জীববিজ্ঞানের উদ্ভিদবিদ্যা অংশের ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্র মেলেনি। বাকি সব পরীক্ষার প্রশ্নের ক্রম আগে-পিছে করা থাকলেও ফাঁস হওয়া প্রশ্ন প্রায় মিলে গেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মিঞা বলেন, সাজেশন আকারে বাইরে প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে—এটা তিনি শুনেছেন। তবে মূল প্রশ্নের সঙ্গে কয়েকটি পার্থক্যের উদাহরণ শুনে তিনি বলেন, এগুলোকে তো পার্থক্য বলাই যায় না। কীভাবে এটা হচ্ছে তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। তিনি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু হুরাইরার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম।’