Thank you for trying Sticky AMP!!

পদ্মা সেতু দুর্নীতির তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ওপর করা বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহান্স জাট।
এতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি বা দুর্নীতির ষড়যন্ত্র নিয়ে সরকার যে তদন্ত করেছে, তা অবাধ, সুষ্ঠু তথা নিরপেক্ষ হয়নি। বিশ্বব্যাংকের কাছে সরকারের ওই প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, অনেকেরই নাম এতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অভিযুক্তের তালিকায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম না থাকা নিয়ে বড় প্রশ্ন বিশ্বব্যাংকের। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের ওপর সরকারের পক্ষে তদন্তটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সূত্র জানায়, কানাডার পুলিশের উদ্ধার করা ডায়েরিতে একাধিক ব্যক্তির নাম থাকলেও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে তাঁদের সবার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
অর্থমন্ত্রীর সচিবালয়ের অফিসকক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় তাঁর সঙ্গে প্রথমবারের মতো সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, জমা দেওয়ার সময় প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশগুলো অর্থমন্ত্রীকে পড়ে শোনান জোহান্স জাট। প্রতিবেদনটি মূলত দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত ইন্টেগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সি বিভাগের তৈরি। শিগগিরই এই প্রতিবেদন নিয়মানুযায়ী ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দুদকের প্রতিবেদনটির ব্যাপারে এতে কিছু (প্রশ্ন তোলা অর্থে) পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।’

কান্ট্রি ডিরেক্টরের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি এখনো জানি না, এতে কী আছে। বিশ্বব্যাংকের চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি এখন আমার ব্যাগে। তারা এটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।’

বরাবরের মতো অর্থমন্ত্রী গতকালও বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো চুরি-টুরি হয়নি। হওয়ার কোনো সুযোগও (চান্স) নেই। আন্তর্জাতিক দরপত্র হয়েছে, যা মূল্যায়নের জন্য বাইরের লোকদের ব্যবহার করা হয়েছে। আমি একদমই মনে করি না যে, এতে কোনো দুর্নীতি হয়েছে।’

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুদকের মামলা রয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বলতে পারেন দুর্নীতি হতে পারত, কিন্তু হতে পারেনি। আমরা তা রোধ করতে পেরেছি। এ জন্য সরকার বরং সাধুবাদ পেতে পারে।’ দুর্নীতির ষড়যন্ত্র কি দুর্নীতি নয়—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘না। দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হলো এই ব্যাটারা চেষ্টা করছে, যাতে ওই ব্যাটা কাজটা পেতে পারে।’

তাহলে ষড়যন্ত্রের জন্য কি কেউ শাস্তি পাবেন না—এই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শাস্তি পেতেই পারেন। আমি জানি না। সাক্ষীর ওপর নির্ভর করবে।’

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সহযোগিতা না করায় ২০১২ সালের জুনে প্রতিশ্রুত ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। এরপর শর্ত সাপেক্ষে অর্থায়নে ফিরে আসতে সম্মতি দিয়েছিল সংস্থাটি। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে সরকারই সিদ্ধান্ত নেয়, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ না নিয়ে বরং নিজেদের অর্থায়নেই নির্মাণ করবে পদ্মা সেতু।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরও পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। জোহান্স জাট বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের জনগোষ্ঠী তথা বাংলাদেশের গোটা অর্থনীতির জন্যই পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক আর অর্থায়ন করছে না।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সক্ষমতা সরকারের আছে কি না জানতে চাইলে কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, ‘এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে বাংলাদেশ সরকার। তবে আমি মনে করি, বাজেট বরাদ্দের বাইরেও দাতাদের সহায়তা, আন্তর্জাতিক ঋণ ও সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা—এসব কিছু মিলিয়ে বিবেচনা করলে পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের ভালোই একটি প্রস্তুতি রয়েছে।’

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সার্বিক ঋণ কর্মসূচির ওপর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে জোহান্স জাট বলেন, চলতি অর্থবছরের জন্য ১৬০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্বব্যাংকের পর্ষদ সভায়। আগামী অর্থবছরের জন্যও রয়েছে ১৬০ কোটি ডলার।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য নিরসন ও বৈষম্য দূরীকরণে বাংলাদেশ ভালো করছে বলেও সাংবাদিকদের জানান তিনি।

নিউজপ্রিন্ট প্রসঙ্গ: দেশীয় শিল্প বিকাশের সুযোগ দিতে আগামী অর্থবছরের জন্য নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশীয় শিল্প বিকাশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে আপনারা মোটাসোটা ভাষায় লেখেন। এবার সেই সুযোগ বেশি দেওয়া হয়েছে।’