Thank you for trying Sticky AMP!!

পরপর দুই দফা বন্যায় কাহিল মানুষ

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। ছবি: প্রথম আলো

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদনদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে যাচ্ছে। পরপর দুই দফা বন্যায় মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ধরলার পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

জেলার ৯টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৫ শতাধিক গ্রামের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সদরের মধ্য কুমোরপুর হয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা সদর যাওয়ার পাকা রাস্তা এখন পানির নিচে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বানভাসি মানুষের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।

ধরলা নদীর পূর্ব পারের ৪টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নৌকাই চলাচলের একমাত্র বাহন। পরিবারগুলো ঘরে চৌকি উঁচু করে, নৌকায় ও উচুঁ সড়কে অবস্থা নিয়ে আছে।

সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের জগমোহন ও নানকার চরে ধরলা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে লোকজন বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। সকালে দেখা যায়, আবদুল হক, আবুল কাশেম, রাজ্জাক ও আহাদ আলী নৌকায় করে বসতঘর ভূরুঙ্গামারী পাকা সড়কে নিয়ে তুলছেন। তাঁরা জানান, প্রচণ্ড স্রোতে বসতঘর ভেসে যাচ্ছিল। কোনোরকমে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন।

কোথাও কোমরসমান, কোথাও বুকসমান পানি উঠে গেছে। নৌকাই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। ছবি: প্রথম আলো

হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উমর ফারুক জানান, ধরলা নদীর পানির প্রবল চাপে সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সারডোব গ্রামের বাসিন্দা জহুর উদ্দিন বলেন, সোমবার সকাল ৮টার দিকে বাঁধটি ভেঙে পানি প্রবল বেগে ধেয়ে আসে। একে একে ৫টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। অনেক মালামাল ভেসে যায়। তীব্র স্রোতের কারণে নৌকা নিয়ে সেখানে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাঁধটি ভাঙার কারণে হলোখানা, ভাঙামোড়, কাশিপুর, বড়ভিটা ও নেওয়াশি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম একে একে প্লাবিত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে গবাদীপশু নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন। তাঁদের সরিয়ে নিতে নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না। বাঁধের এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ফুলবাড়ী উপজেলা সদর ও কুড়িগ্রাম জেলা সদরে যাতায়াত করতেন। যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, বাঁধটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। তবে বিকল্প বাঁধ রক্ষার জন্য বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু পানির প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত বাঁধটি ভেঙে যায়।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম জানান, পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের জন্য দুটি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, জেলায় ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৪০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।