Thank you for trying Sticky AMP!!

পরিকল্পনায় ঘাটতি, কাজে সময়ক্ষেপণ

বে-নজির আহমেদ

দেশে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, কাজে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে সব কাজেই সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণের পরিধি বিবেচনায় নিয়ে বড় পরিসরে পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে সরকারের ঘাটতি রয়েছে। আবার সংক্রমণ প্রতিরোধে সামগ্রিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের ঘাটতি আছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ বিভাগগুলোর মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

সরকার এখন পর্যন্ত এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যাতে করোনার সংক্রমণ কমতে পারে। সংক্রমণের ভিত্তিতে এলাকা চিহ্নিত করা এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম খুবই সীমিত জায়গায় হয়েছে। এই কাজ ভালোভাবে করা গেলে সংক্রমণ কমত।

করোনা শনাক্তের পরীক্ষা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলার পরও করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা নিয়ে এখনো দ্বিধায় রয়েছে সরকার। অ্যান্টিজেন পরীক্ষা দ্রুত চালু করলে যে সুবিধা পাওয়া যেত, দেরিতে শুরু করলে তা আর পাওয়া যাবে না।

সব কার্যক্রমে সংক্রমণের আগে আগে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমরা যাচ্ছি সংক্রমণের পেছনে পেছনে। প্রতিরোধ কার্যক্রমে জোর দিতে হবে। কারণ, প্রতিরোধই সমাধান। এখনো যদি সরকার উদ্যোগী হয়, তাহলে তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে করোনাকে পরাজিত করা সম্ভব। এ জন্য অনতিবিলম্বে জনস্বাস্থ্যবিদদের নিয়ে দল গঠন করে উপজেলা, পৌরসভা, জেলা ও বিভাগীয় শহর এলাকায় কার্যক্রম শুরু করতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ডিগ্রি রয়েছে, এমন অনেক চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ রয়েছেন দেশে। তাঁদের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়ে দল গঠন করতে হবে। এই দল শনাক্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলে তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ঝুঁকি বিবেচনায় উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন—এই তিন ভাগে ভাগ করবে। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের কয়েক মিনিটের মধ্যে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করবে। সেখান থেকে কেউ পজিটিভ হলে তাঁকে আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্ন করবে। এই প্রক্রিয়া দেশের সব জায়গায় একসঙ্গে করতে হবে। এই প্রক্রিয়া বারবার হতে থাকলে তিন মাসের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার ও ওয়ারীতে লকডাউনের মধ্যে নতুন বেশ কিছু রোগী শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এই রোগীরা আনডিটেকটেড বা লুক্কায়িত ছিলেন। এই দুই এলাকার মতো সারা দেশে যদি ৫০০-র মতো হটস্পট থাকে আর সেখানেও লুক্কায়িত রোগী থাকেন, তাহলে রোগীর সংখ্যা কত দাঁড়ায়? লুক্কায়িত এসব রোগীর মাধ্যমে আরও অনেকে আক্রান্ত হবেন বা হচ্ছেন। এ ছাড়া উপসর্গহীন অনেক রোগীও রয়েছেন।

আর্থসামাজিক দিক থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল রয়েছে। গত ৬ জুন থেকে ভারতে দৈনিক ১০ হাজারের বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে। জুলাইতে এসে তা দৈনিক ২০ হাজারে পৌঁছেছে। ভারতের এই লেখচিত্র বা গ্রাফের সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রাফের মিল নেই কেন? দেশেও সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাই থাকার কথা। কিন্তু আমরা করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা কম করছি। এখনো প্রতি ১০ লাখে দেশে পরীক্ষা হচ্ছে ৫ হাজারের মতো। পরীক্ষা কম হওয়ায় প্রকৃত চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে না।

দেশে করোনাসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্তগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে না। তথ্য ব্যবস্থাপনায় বড় ঘাটতি রয়েছে। সংগ্রহ করা তথ্যও ঠিকমতো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না। আবার বিশ্লেষণের পর তথ্যের ব্যবহারও কম। অনেক রোগীর ঠিকানা না থাকায় সংক্রমণের ভিত্তিতে লাল, সবুজ এলাকা চিহ্নিত কার্যক্রম সঠিকভাবে কার্যকর করা যাচ্ছে না। তথ্যের অভাবে পরিকল্পনাতেও ঘাটতি থাকছে।

কোন কোন কারণে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, ঘাটতিগুলো কোথায়, কারা দায়ী—সেগুলো বের করতে স্বাধীন কমিশন গঠন করা দরকার। একই সঙ্গে করণীয় কী, তা-ও কমিশন নির্ধারণ করবে। ঘাটতিগুলো বের করে স্বাস্থ্য খাতকে জনবান্ধব, গণমুখী করার সুযোগ রয়েছে।

লেখক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক