Thank you for trying Sticky AMP!!

পরিবারগুলো অথই সাগরে

‘একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি চলে গেল। কী করব জানি না। কী নিয়ে থাকব? ছোট ছোট দুটো মেয়ে এখনো পথ চেয়ে থাকে বাবার। তাদের ভবিষ্যৎ কী? তাদের কী জবাব দেব?’

কথা বলতে বলতে খালেদা আকতারের গলা ধরে আসে। ফোনের এই প্রান্ত থেকে ঠিকই বোঝা যাচ্ছিল তাঁর গুমরে কাঁদার আওয়াজ। গত দুই সপ্তাহ ক্ষণে ক্ষণে কান্না আর অনিশ্চয়তা পেয়ে বসেছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির লালনাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তৈয়বের স্ত্রী খালেদাকে।

১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে বাঘাইছড়ির বটতল (নয় কিলোমিটার) এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে আবু তৈয়ব মারা যান। এই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে আরও ছয়জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২৫ জন। নিহতদের পরিবারগুলো যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে নিয়তির কাছে।

আবু তৈয়ব লালনাঘোনা এলাকায় পৈতৃক বাড়িতে থাকতেন। ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পরিবারের ছয়জনই শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। তৈয়ব ২০১৫ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। তাঁর দুই মেয়ে ইশরাত ও নুসরাত। বড়টির বয়স চার পেরিয়েছে। ছোটটির এক বছর।

ঘটনার দিন দুপুরেও স্ত্রীর সঙ্গে তৈয়বের কথা হয়। ‘দুইটার দিকে ফোনে কথা হয়। ভোটকেন্দ্রে তখন তিনি। মেয়েদের খবর জানতে চান। ওই ফোনই ছিল শেষ ফোন। সরকারি কাজে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে চলে গেল। তার কী অপরাধ ছিল? এখন সরকার কী করবে আমাদের জন্য?’ প্রশ্ন খালেদার।

বর্তমানে শ্বশুরবাড়িতে রয়েছেন খালেদা। স্বামীর বড় ভাই আবু তাহের তাঁদের দেখভাল করছেন। আবু তাহের বলেন, ভাইয়ের খুনিদের বিচার হবে কি না জানি না। শুধু জানি পরিবারটি শেষ হয়ে গেল।

একই ঘটনায় প্রাণ হারান বাঘাইছড়ির কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমির হোসেনও। আমিরের বড় ছেলে রবিউল এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আর দুটি মেয়ে রয়েছে তাঁর। একজন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। অপরটির বয়স চার মাস। আমির হোসেন তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। মা ছালেহা বেগম ছেলের জন্য মাঝেমধ্যে কেঁদে ওঠেন। ছোট ভাই শাহদাত হোসেন বলেন, হঠাৎ করে পারিবারিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। মা বড় ভাইয়ের সঙ্গে বাঘাইছড়িতে থাকতেন। ছেলের জন্য এখনো কাঁদেন তিনি। ভাবি, ভাতিজা-ভাতিজিদের ভবিষ্যৎ শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেল। কিছু সাহায্য সহযোগিতা মিললেও তা যথেষ্ট না।

ছেলে আল আমিনকে হারিয়ে মা বিবি কুলসুম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখনো খাওয়াদাওয়ায় মন নেই তাঁর। বিবি কুলসুমদের বাড়ি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে কাচালং বাজার এলাকায়। আল আমিন ছিলেন আনসার ভিডিপির সদস্য।

নিহত আনসার ভিডিপি সদস্য জাহানারা বেগমের বাড়িও কাচালং বাজার এলাকায়। জাহানারা বেগমের স্বামী মো. তসলিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে দুই ছেলে। এর মধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তিন সন্তান নিয়ে কষ্টে আছি। নিজে শক্ত থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু ছেলেমেয়েদের দেখলে কষ্ট হয়।’

আনসার সদস্য মিহির কান্তি দত্তের পরিবার এখন অথই সাগরে। দুই ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী শেবু রানী দত্ত দিশেহারা। অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি হবে ছেলেদের। সে আশায় দিন গুনছেন তাঁরা। বড় ছেলে পিয়াল দত্ত স্নাতক পরীক্ষা দিয়েছেন। ছোট ছেলে অভিষেক দত্ত এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

পিয়াল দত্ত বলেন, ‘বাবা ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী। এখন জানি না কী হবে ভবিষ্যতে। চাকরি দেবেন বলে অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন। সেই আশায় দিন গুনছি।’

এই ঘটনায় প্রাণ হারান ভিডিপি সদস্য বিলকিস বেগম ও মিন্টু চাকমা নামে এক ব্যক্তি। মিন্টু জেএসএসের (এম এন লারমা) সদস্য।