Thank you for trying Sticky AMP!!

পরিবারের সদস্যসংখ্যা সীমিত রাখতে হবে

গোলটেবিল বৈঠকে গতকাল বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। পাশে সাংসদ ফজিলাতুন নেসা l ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম এ পথপরিক্রমায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ কার্যক্রমের ফলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং যোগাযোগ কৌশলের অভিনবত্বের দিক দিয়ে এগিয়ে গেছে দেশ। তবে আগে যেভাবে এ কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হতো, তা খানিকটা থমকে গেছে। বর্তমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ কার্যক্রমকে চাঙা করতে হবে। এ কার্যক্রম সফল হলে তা দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

গতকাল সোমবার ‘পরিবার পরিকল্পনা: জনগণের ক্ষমতায়ন, জাতির উন্নয়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় আলোচকেরা এভাবেই এ কার্যক্রমের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে শুধু সন্তানসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বা কয়েকটি পদ্ধতি—এভাবে চিন্তা করলে হবে না; চিন্তা করতে হবে এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ‘জীবন বাঁচানো ও জীবন সাজানো’ সম্ভব। বৈঠকে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

প্রথম আলো ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত এ বৈঠকের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, একসময় দেশে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের কথা বলতে সবাই ভয় পেতেন। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যে সাফল্য এসেছে, তা সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের সমন্বিত কার্যক্রমের ফলেই সম্ভব হয়েছে।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্যই পরিবারের সদস্যসংখ্যা সীমিত রাখতে হবে। বাড়িতে প্রসবের সংখ্যা কমিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বাড়ানো, বাল্যবিবাহ কমানো, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা, রাজনৈতিক বক্তৃতায়, জাতীয় সংসদে এবং বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে সভা, সেমিনার আয়োজনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন তিনি। এ ছাড়া দেশের জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সাংসদ ফজিলাতুন নেসা বলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সরকারের একার পক্ষে সফল করা সম্ভব নয়, সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে পুরুষের চেয়ে সব সময় কেন নারীর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ফজিলাতুন নেসা বলেন, একজন নারী যখন সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন, তখন তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে থাকেন। আবার জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য যখন কোনো পদ্ধতি নিতে যাচ্ছেন, তখন তিনি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে চলে যাচ্ছেন। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই দুই অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো জরুরি।

বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক হোসেন জিল্লুর রহমান এবং ইউএনএফপিএর টেকনিক্যাল অফিসার আবু সাইদ হোসেন।

হোসেন জিল্লুর রহমান পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে বিনিয়োগ করাকে ‘বেস্টবাই’ হিসেবে উল্লেখ করেন। বর্তমানে এ কার্যক্রম চিন্তার জগতে এবং মাঠ কৌশল কার্যক্রমে কিছুটা থমকে গেছে। প্রচারণাও অনেক কমে গেছে। তিনি পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম ও সিলেটের কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানো, শহুরে দরিদ্র নাগরিকের কাছে সেবা পৌঁছানো এবং প্রসব–পরবর্তী জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবার বিষয়টিতে নজর বাড়ানোর সুপারিশ করেন।

তবে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম থমকে গেছে, তা মানতে নারাজ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার। তিনি বলেন, কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়াসহ হয়তো কিছু কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে না, কিন্তু কার্যক্রম থমকে আছে বলা যাবে না। কার্যক্রম চলছে বলেই দেশের জনসংখ্যা কমেছে এবং তা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে। কিশোরী মাতৃত্ব বন্ধে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য কর্নার স্থাপন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হলেও ২০ বছর হওয়ার আগে যাতে কেউ সন্তান না নেয়, সে ধরনের প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইউএসএআইডি-ডিএফআইডি এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্টের চিফ অব পার্টি হালিদা হানুম আখতার বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রম। এ কার্যক্রম নিয়ে প্রচারণা থামালে চলবে না।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর মঈনুদ্দীন আহমেদ জানান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের চিকিৎসকের সংকট ছিল। নতুন করে ৩৩৯ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক খিজির হায়াত খান বলেন, দেশে ২ লাখ ৭৫ হাজার মসজিদ আছে। ১ লাখ ৭২ হাজার ইমামকে জনসংখ্যা এবং পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান আমিনুল হক বলেন, সব এলাকার জন্য গণকার্যক্রম নিলে চলবে না। চাহিদা বা টার্গেট চিহ্নিত করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

পপুলেশন কাউন্সিলের অ্যাসোসিয়েট শরীফ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, যেসব এলাকায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সফল বা সন্তান নেওয়ার সংখ্যা কমে এসেছে, সেসব এলাকার ইতিবাচক উদাহরণগুলোকে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোতে কাজে লাগাতে হবে।

আইপাসের দেশীয় পরিচালক সাইদ রুবায়েত স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেন।

সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির তসলিম উদ্দিন খান বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়লে অন্যান্য সামাজিক ইন্ডিকেটরও ভালো হয়।

অভিনয়শিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌস পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবাদান কার্যক্রম বাড়ানো এবং গণমাধ্যমকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। যুব প্রতিনিধি চিকিৎসক তাসনিম জারা বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে তরুণদের ব্যবহার করতে হবে এবং তরুণদের কাছে তথ্য পৌঁছাতে হবে।