Thank you for trying Sticky AMP!!

পরীক্ষায় টিকেও চাকরির জন্য এত অপেক্ষা

>

• মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর
• সাত বছর ধরে নিয়োগের অপেক্ষায় চার হাজার যুবক
• চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ নিয়ে মামলা হওয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না
• প্রায় চার হাজার যুবক একটি চাকরির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন
• চতুর্থ শ্রেণির এই দুটি পদে আদালতে মামলা করা হয়েছে

চতুর্থ শ্রেণির একটি চাকরির আশায় সাত বছর আগে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন বেকার মশিউর রহমান (২৭)। পাস করে দেন মৌখিক পরীক্ষা। সেটাও প্রায় দেড় বছর আগে। এই দীর্ঘ সময় আশা নিয়ে বসে আছেন তাঁর একটা চাকরি হবে। কিন্তু আজও চাকরি হয়নি, এমনকি মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলও জানতে পারেননি।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শঙ্করপুর (চণ্ডিপুর) গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মশিউর রহমানের মতো প্রায় চার হাজার যুবক একটি চাকরির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি নিয়োগ নিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ার বাকি পদগুলোতে নিয়োগ সম্পন্ন হলেও চতুর্থ শ্রেণির ৯৫৮টি পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। কর্তৃপক্ষ বলছে, চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ নিয়ে মামলা হওয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না।

মশিউর রহমান জানান, অনেক কষ্টে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি না পেয়ে কষ্টে দিন যাচ্ছিল তাঁর। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ পত্রিকায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ে। মোট ২২টি পদে ১ হাজার ৯৬৫ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সারা দেশের ৬১টি জেলায় এই নিয়োগের জন্য আবেদন চাওয়া হয়। প্রায় চার লাখ চাকরিপ্রত্যাশী এতে আবেদন করেন। চতুর্থ শ্রেণির আবেদনকারী কম হওয়ায় তিনি ওই পদে আবেদন করেন। এরপর ওই সালের ২১ জুন তাঁর লিখিত পরীক্ষা হয়, কিন্তু সেই পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তা বাতিল হয়। আবার পরীক্ষা দেন ২০১৭ সালের ৭ জুলাই। সেই পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। এরপর মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয় ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। সেই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন।

মশিউর বলেন, লিখিত পরীক্ষার পর প্রায় ১০ হাজার আবেদনকারী উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে তাঁরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। চতুর্থ শ্রেণির বুক সর্টার ও এমএলএসএস পদের জন্য মৌখিক পরীক্ষা দেন ৩ হাজার ৮৭৮ জন। এর মধ্যে ৯৫৮ জনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা।

গাইবান্ধা জেলায় জন্ম নেওয়া দীপন কুমার বর্মণ (৩৪) বর্তমানে থাকেন ঢাকার গাজীপুরে। তিনি বলেন, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেছেন। চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে এমএলএসএস পদের জন্য আবেদন করেন। পরীক্ষা দিয়ে চাকরির অপেক্ষা করতে করতে বয়স শেষ করে ফেলেছেন। তিনি জানান, স্ত্রী, এক মেয়ে, মা-বাবা, ভাইসহ আট সদস্যের পরিবার, যাঁরা সবাই বর্তমানে তাঁর ওপর নির্ভরশীল। একটা কোম্পানিতে সামান্য বেতনে চাকরি করে বেঁচে আছেন। এই চাকরি না পেলে আর কখনো সরকারি চাকরি পাবেন না।

ঢাকার বাসিন্দা আক্তার হোসেন বলেন, এই চাকরির অপেক্ষায় থেকে অনেকে সরকারি চাকরির বয়স শেষ করে ফেলেছেন। আবার অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন। অনেকে আছেন, যাঁরা সংসারজীবনে যেতে পারছেন না। তিনি বলেন, সব পদে নিয়োগ দেওয়া হলো, শুধু চতুর্থ শ্রেণির পদে দেওয়া হলো না। গরিব অসহায় বেকার ছেলেগুলোর কথা চিন্তা করে সব জটিলতা নিরসন করে এই নিয়োগ চূড়ান্ত করার দাবি জানান আক্তার।

শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মোহাম্মদ শামছুল হুদা মুঠোফোনে জানান, চতুর্থ শ্রেণির এই দুটি পদে আদালতে একাধিক মামলা করা হয়েছে। আগে মাস্টাররোলে কর্মরত ব্যক্তিরা এই মামলাগুলো করেছেন। যে কারণে তাঁরা নিয়োগপ্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসেও নিয়োগ দিতে পারছেন না। যে পদগুলোতে মামলা ছিল না, সেগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আশা করেন, দ্রুতই এর একটা সমাধান করতে পারবেন।