Thank you for trying Sticky AMP!!

পরীক্ষা দিতে পারেননি ১৮ পরীক্ষার্থী

প্রবেশপত্র না পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার ঝাউবোনা মডেল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ১৭ পরীক্ষার্থী গতকাল সোমবার এইচএসসি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রবেশপত্র না পেয়ে আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি এক পরীক্ষার্থী। এ জন্য ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী অধ্যক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন।

গতকাল বিকেলে কথা হয় ভোলাহাটের ঝাউবোনা মডেল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা দিতে না পারা দুই শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম ও মো. সৈকতের সঙ্গে। তাঁরা জানান, প্রতিষ্ঠানটি থেকে এবার তাঁরা মাত্র ১৭ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তাঁরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে ২১৭০ টাকা দিয়ে পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন। পরীক্ষার চার–পাঁচ দিন আগে প্রবেশপত্র সংগ্রহের জন্য তাঁরা কলেজে যান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দু–এক দিনের মধ্যে দিয়ে দেবে বলে কালক্ষেপণ শুরু করে।

শেষে পরীক্ষার দিন সকালে কলেজে গিয়ে প্রবেশপত্র চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায়, কিছুক্ষণের মধ্যে ঢাকা থেকে ই-মেইলে প্রবেশপত্র আসবে, তখন দেবে। পরীক্ষা বেলা দুইটায় শুরুর কথা।

কিন্তু বেলা ১১টা পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা পারভিনের কাছে ছুটে গিয়ে ঘটনাটি জানান। বিষয়টি দেখার জন্য ইউএনও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সরদারকে দায়িত্ব দেন। তাঁদের জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিউলী খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই শিক্ষার্থীরা শেষ দিকে ভর্তি হয়। আমরা যখন তালিকা পাঠাই, তখন সার্ভারের সমস্যা ছিল। এ জন্য তখন চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম ওঠেনি। কিন্তু পরে আবারও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করা হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান বাইরে থাকায় তাঁদের প্রবেশপত্র পাওয়া যায়নি।’

শিউলী খাতুন আরও বলেন, ‘এ সমস্যা শুধু আমাদের নয়, এবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১১৮৫ জন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারেনি। তবে এসব শিক্ষার্থীর পরিপূরক পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের কোনো বছর যাতে নষ্ট না হয় এবং পরবর্তী পরীক্ষাগুলো যেন তারা দিতে পারে,
এ বিষয় দুটি নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক ঢাকায় অবস্থান করছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা সাধারণ বোর্ডের পরীক্ষার সঙ্গেই হয়ে থাকে।’

এদিকে নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রবেশপত্র না পেয়ে নাহিদ হাসান নামে মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী তাঁর আলিম পরীক্ষা দিতে পারেননি। তিনি উপজেলার নাজিরপুর সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ফরম পূরণ করেছিলেন। অধ্যক্ষের অবহেলায় প্রবেশপত্র পাননি বলে অভিযোগ করেন নাহিদ।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ওই মাদ্রাসা থেকে মোট ২৩ জন শিক্ষার্থী যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে ফরম পূরণ করেছিলেন। অন্যদের সবার প্রবেশপত্র এলেও শিক্ষা বোর্ড থেকে তাঁরটি আসেনি।

অধ্যক্ষ মো. আবদুল হকের কাছে প্রবেশপত্র না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, ‘শিক্ষা বোর্ডে’র ভুলের কারণে পবেশপত্রটি আসেনি। আগামী বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে সে।

বিধিমোতাবেক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কমপক্ষে ১০ দিন আগে প্রবেশপত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে এসে থাকে। ভুলত্রুটি বা কোনো প্রবেশপত্র না এলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানের শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সমাধান করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অধ্যক্ষ আবদুল হক পরীক্ষাবঞ্চিত শিক্ষার্থীর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নেননি।

গতকাল সন্ধ্যায় ওই পরীক্ষার্থী মুঠোফোনে অভিযোগ করেন, সবার আগে অধ্যক্ষের কাছে পরীক্ষার ফি জমা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। সংসারে অভাব থাকায় নিয়মিত মাদ্রায় যেতে পারেননি। তবু পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে থেকেই অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে এবং মুঠোফোনে তাঁর প্রবেশপত্রের জন্য জন্য যোগাযোগ করেছেন।

সর্বশেষ অধ্যক্ষ পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে প্রবেশপত্র দেওয়ার কথা বলেছিলেন। গতকাল উপজেলার মশিন্দা আলীয়া মাদ্রাসার কেন্দ্রে গিয়ে সবাই প্রবেশপত্র পেলেও নাহিদ হাসান প্রবেশপত্র হাতে না পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এর ফলে জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে গেল।

অধ্যক্ষ আবদুল হক মুঠোফোনে বলেন, প্রবেশপত্রের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আগামী বুধবারের মধ্যে প্রবেশপত্রটি হাতে পাবেন ওই শিক্ষার্থী। অসাবধানতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অধ্যক্ষের অসচেতনতার কারণে এমনটি হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।