পাকিস্তানিদের ভিসা বন্ধের খবর প্রত্যাখ্যান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
পাকিস্তানিদের জন্য বাংলাদেশের ভিসা স্থগিত করার যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তবে ভিসা ইস্যুতে বিলম্ব হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেছেন, উদ্ভূত সমস্যা ইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষের আরোপিত। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমে খবরটা এসেছে উল্টোভাবে। এই সংকট ইসলামাবাদের আরোপিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে যে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের পাঠানো হবে, তাঁদের ভিসা প্রদানে তাঁরা নিষ্ক্রিয়। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করিনি, কিন্তু কিছু কারণে তা বিলম্বিত হতে পারে, এটা বিশ্বব্যাপী সাধারণ ঘটনা। ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশনে জনশক্তির স্বল্পতা রয়েছে, যা ভিসা প্রদান প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে। এর কারণ হলো, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ইসলামাবাদে নবনিযুক্ত বাংলাদেশ ভিসা কাউন্সিলরের ভিসা প্রদান বিলম্বিত করছে।’ তিনি বলেন, তা ছাড়া ইসলামাবাদ ভিসা ইস্যুর কাজে সাময়িকভাবে নিয়োজিত অফিসারের ভিসা নবায়ন করছে না।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এই সমস্যায় তারা (ইসলামাবাদ) ফেলেছে আমাদের। সেখানে আমাদের জনশক্তির সমস্যা না মিটলে আমরা কীভাবে ভিসা ইস্যু করব।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো প্রকার ঝামেলায় যেতে চায় না ঢাকা। আমরা তাদের সঙ্গে আগেও যোগাযোগ করেছি এবং এখনো যোগাযোগ রাখছি আমাদের কূটনীতিকদের ভিসা ইস্যু সমস্যার সমাধানে। ঢাকায় নিয়োগকৃত পাকিস্তানি দূতের পরিচয়পত্র গ্রহণের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কারণে এর আগে বাংলাদেশ ইসলামাবাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বিষয় (কূটনৈতিক অঙ্গনে)। তারা নতুন প্রস্তাব দিলে আমরা অবশ্যই তা বিবেচনা করব।’
এক বছরের বেশি সময় ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনে কোনো দূত নেই।
ইসলামাবাদে দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফিরতে গত জানুয়ারির শুরুতে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিলেন প্রেস কাউন্সেলর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। চার মাসেও বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ১৩ মে থেকে ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছে ইসলামাবাদে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশন। গতকাল সোমবার রাতে পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সোমবার বিকেলে রুশ বার্তা সংস্থা স্পুতনিক নিউজ দিল্লি থেকে করা এক খবরে বলেছে, কূটনৈতিক অচলাবস্থার জেরে পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করেছে বাংলাদেশ।
ঢাকা ও ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সূত্রে যোগাযোগ করে জানা যায়, গত বছরের ৬ নভেম্বরের পর থেকে পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভিসা কাউন্সেলর দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফেরেন। নতুন কর্মকর্তা যোগ না দেওয়ায় গত বছরের নভেম্বর থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ইকবাল হোসেন প্রেস কাউন্সেলরের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত ভিসা কাউন্সেলরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এ বছরের ৩০ মার্চ ঢাকায় ফেরার কথা ছিল ইকবাল হোসেনের। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিজের ও মেয়ের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে গত ৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন প্রেস কাউন্সেলর। অন্যদিকে, শেষ মুহূর্তের গোছগাছের জন্য বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান যেতে ঢাকায় তাঁর স্ত্রী ও ছেলে ভিসার আবেদন করেছিলেন পাকিস্তান হাইকমিশনে।
এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জানুয়ারির শুরুতে আবেদনের পর ভিসার মেয়াদ বাড়াতে বেশ কয়েকবার কূটনৈতিক পত্র পাঠানো হয়েছিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি হবে না, কিছুই আমাকে জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আবার ঢাকায় আমার স্ত্রী ও ছেলে অন্তত তিনবার ভিসার জন্য পাকিস্তান হাইকমিশনে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ভিসা পাননি। ঢাকায় ফিরে যাব বলে গত ৩০ এপ্রিল সব মালপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। এমন এক অবস্থায় আমার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভিসা নিয়ে এমন এক অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে ইকবাল হোসেন ১৩ মে হাইকমিশনার তারিক হাসানকে জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে ভারপ্রাপ্ত ভিসা কাউন্সেলরের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এমন এক প্রেক্ষাপটে অনানুষ্ঠানিকভাবে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন ১৩ মে থেকে পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না।
এদিকে, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানান, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের প্রেস কাউন্সেলর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তাকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে এ বিষয়টি সুরাহার কথা বলা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে পাকিস্তানের নাক গলানো শুরু নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু। পরে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পাকিস্তানের হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাঁদের ঢাকা থেকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়। এর জেরে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের এক কূটনীতিককে সরিয়ে নিতে বলেছিল পাকিস্তান। মোটামুটি কয়েক বছর ধরেই একধরনের শীতল অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক।
আরও পড়ুন
-
যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছেলের মৃত্যু, কান্না থামছে না মা–বাবার
-
সাকিবের সঙ্গে দেখা করলেন প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী, মুহূর্তেই ছবি ভাইরাল
-
রাজধানীর তাপমাত্রা আরও বাড়ল, চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ
-
মোস্তাফিজের এবারের আইপিএল: সাবেক দলের বিপক্ষে উইকেট যে কারণে কম
-
ট্রাম্পের বয়স নিয়ে খোঁচা দিলেন জো বাইডেন