Thank you for trying Sticky AMP!!

পাঞ্জাবে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ফেরার আকুতি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ভারতে টানা লকডাউনের কারণে আটকা পড়েছেন পাঞ্জাবের লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

লকডাউনের কারণে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই অর্থসংকটসহ খাদ্যসংকটে পড়েছেন, এমনকি ঘরবন্দী জীবনে তাঁরা শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে দাবি করে স্বজন ও পঞ্চগড়ের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন।

ওই ভিডিও বার্তাগুলোতে লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটিতে পঞ্চগড় জেলার তিন শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশি প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন বলে দাবি করা হয়।

দেশে ফেরার জন্য শিক্ষার্থীরা ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করেও তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন। এদিকে দেশে পরিবারের লোকজনও তাঁদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের পখিলাগা এলাকার এক স্কুলশিক্ষকের ছেলে ফেরদৌস আল মাসুম ভারতের পাঞ্জাবের লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর মাধ্যমেই অন্য শিক্ষার্থীরা পঞ্চগড়ের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ভিডিও বার্তাগুলো পাঠান। তিনি ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘দিনের পর দিন এভাবে ঘরবন্দী থাকতে থাকতে আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এই অবস্থায় আমি আমার দেশের হাইকমিশনের কাছে একান্ত অনুরোধ জানাই, আপনারা প্লিজ আর সময় নষ্ট না করে, আমাদের আর আশ্বাস না দিয়ে আসলেই কিছু একটা করুন। আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হয়েছে, যদি হাইকমিশন থেকে আমাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে তারা যতটুকু সম্ভব আমাদের সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে যেতে যে ভাড়া প্রয়োজন, সেটিও আমরা দিয়ে দেব। আমাদের দেশ থেকে অভিভাবকেরা আমাদের টাকাও পাঠাতে পারছেন না। আমরা দেশে ফিরে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে রাজি আছি।’

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কুমিল্লার শিক্ষার্থী ওসমান গণি ঈমন ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ইন্ডিয়ার অবস্থান দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকার থেকে যদি কোনো বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়, আমরা ওই ফ্লাইটে যেতে রাজি আছি। আর দেশে গিয়ে যদি কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়, তাতেও আমরা রাজি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই যেন দ্রুত আমাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া খুলনার পার্থ ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘১ মে পর্যন্ত পাঞ্জাবে লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। লকডাউনের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই লকডাউন শুরু হয়। এখন ফেরার মতো কোনো ফ্লাইট নেই। আমরা ফেরার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের কাছে তালিকা চায়। আমরা তালিকা করে তাদের দিই। তারা আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু তারা একবারের জন্য আমাদের খোঁজ নেয়নি। সাত দিন ধরে আমরা তাদের ফোন দিচ্ছি কিন্তু তারা ফোন তুলছে না। আমরা মানসিক যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, প্লিজ, আমাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করুন।’

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. নোমানুল ইসলাম ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘পাঞ্জাবে দিন দিন করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে। আমরা জানি না আর ১০ থেকে ১৫ দিন পর আমাদের খাবার থাকবে কি না। আমরা এম্বাসিতে বারবার যোগাযোগ করে শুধু আশ্বাসই পেয়েছি। কিন্তু কোনো কার্যক্রম দেখিনি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাংলাদেশ সরকার যদি আমাদের জন্য বিমানের ব্যবস্থা করে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিল্লি পর্যন্ত বাসের ব্যবস্থা করে দেবে। প্লিজ, রেসকিউ আস, অ্যান্ড প্লিজ প্রে ফর আস।’

পটুয়াখালী জেলার তামিমুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘গত ১৪ মার্চ থেকে আমরা গৃহবন্দী। বাড়ি থেকে টাকা পাঠাতে পারছে না। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ “প্লিজ, সেভ আস”।’

শিক্ষার্থী ফেরদৌস আল মাসুম মুঠোফোনে বলেন, ‘ভারতে লকডাউনের কারণে আমাদের দেশ থেকে অভিভাবকেরা আমাদের টাকাপয়সা পাঠাতে পারছেন না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে ২০ থেকে ২৫ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আছি। এ ছাড়া অনেকেই বাইরে বিভিন্ন বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছে। আমাদের সবার একই দুর্দশা।’

ফেরদৌস আল মাসুমের বাবা স্কুলশিক্ষক সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘সন্তানেরা বারবার ফেরার জন্য ফোন করছে। করোনার ভয়াবহতায় তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আমরা অভিভাবকেরা খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের চিন্তায় ঘুমাতে পর্যন্ত পারছি না। এমনকি তাদের টাকাপয়সা পাঠানোরও সব প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, দ্রুত আমাদের সন্তানদের দেশে ফিরিয়ে আনুন।’