Thank you for trying Sticky AMP!!

পাথরের মজুত বাড়ছে, বিক্রি কমছে

উৎপাদন বাড়লেও বিক্রি না হওয়ায় পাথরের স্তূপ জমছে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে। ছবি: প্রথম আলো
>

• খনিতে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন পাথর অবিক্রীত রয়েছে
• পাথর কম লোড হওয়ার কারণে পরিবহন খরচ প্রায় দ্বিগুণ
• ভারত থেকে আমদানি করা পাথরের দাম কম পড়ে
• উত্তোলনের তুলনায় পাথর বিক্রি অর্ধেকের কাছাকাছি

দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে উত্তোলিত পাথরের মজুত বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ মেট্রিক টন। প্রকল্পে পাথর উত্তোলন বাড়লেও বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসেই মজুতের পরিমাণ বাড়ছে। তাই আর্থিকভাবে লোকসানে থাকা সরকারের প্রতিষ্ঠানটি পাথরের দাম কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

খনি কর্তৃপক্ষ, পাথর উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, পাথরের ডিলার এবং শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাথর বিক্রি বাড়াতে খনি কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে বিপণনের কোনো ব্যবস্থা করেনি। পাথর পরিবেশকদের (ডিলার) কমিশন কমিয়ে দেওয়ায় তারা পাথর নিতে আগ্রহী হচ্ছে না। এর মধ্যে গত বছর সড়ক বিভাগ পাথর পরিবহনে মোটরযানের ওজন নির্ধারণ (এক্সেল লোড) করে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় পাথর বিক্রি আরও কমে গেছে।

মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। আর খনির উত্তোলিত পাথর বিক্রির দায়িত্বে আছে পেট্রোবাংলার নিয়ন্ত্রণাধীন মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)। এই খনির পাথর সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয় না। নির্ধারিত ডিলারের মাধ্যমে পাথর বিক্রি করা হয়। বর্তমানে ৪৫ জন ডিলার রয়েছেন।

খনি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পাথরখনিতে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন পাথর অবিক্রীত রয়েছে। গত বছর খনি থেকে প্রায় ১১ লাখ ৬৬ পাথর মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। বাকি পাথরগুলো অবিক্রীত থেকে যায়।

চলতি বছরের শুরুর মাস থেকে পাথর উত্তোলনের পরিমাণ আরও বেড়েছে। বছরের প্রথম তিন মাসে খনি থেকে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এপ্রিল মাসের শুরু থেকে খনিতে উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এপ্রিল মাসের ২৭ দিনে বিক্রি হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন। বাকি পাথরগুলো মজুত হয়েছে।

খনির একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে খনির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রতিমাসে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদিত হচ্ছে ১ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। কিন্তু বিক্রির পরিমাণ এর অর্ধেকের কাছাকাছি। বিক্রি না বাড়লে মজুত করা পাথর বিক্রিতেই এক বছরের বেশি সময় লাগবে।

খনির কর্মকর্তা ও ডিলাররা বলছেন, আগে ১০ চাকার ট্রাক (ট্রাকের ওজনসহ) ৪২ থেকে ৪৬ মেট্রিক টন ও ৬ চাকার ট্রাক (ট্রাকের ওজনসহ) ৩০ থেকে ৩২ মেট্রিক টন পাথর পরিবহন করত। কিন্তু ২০১৮ সালের মোটরযান এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ বিধি অনুযায়ী ১০ চাকার ট্রাক (ট্রাকের ওজনসহ) ৩২ মেট্রিক টন ও ৬ চাকার ট্রাক (ট্রাকের ওজনসহ) ২২ মেট্রিক টনের বেশি পাথর বহন করতে পারছে না। ফলে পাথর বিক্রি অনেকটা কমেছে।

খনির পুরোনো ডিলারদের একজন মো. মমিনুল হক বলেন, পাথর কম লোড হওয়ার কারণে পরিবহন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগে ৫ শতাংশ কমিশন দেওয়া হলেও এখন ৩ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে। এই ৩ শতাংশের ওপর আবার ভ্যাট কাটছে ১৫ শতাংশ। ফলে সামগ্রিকভাবে লাভ কমে যাওয়ায় ডিলাররা পাথর বিক্রিতে আগ্রহ হারাচ্ছে।

গত রোববার খনি এলাকা ঘুরে দেখা যায় খনির ফাঁকা জায়গাগুলোতে অবিক্রীত পাথর স্তূপ করে রাখা। আকৃতি অনুযায়ী পাথরগুলো আলাদা করা হয়েছে। কয়েকটি ট্রাকে পাথর ওঠানোর কাজ চলছে। খনির মূল ফটকের বাইরে ৮–১০টি ট্রাক পাথর তোলার অপেক্ষায় আছে। মূল ফটকের সামনেই ট্রাকের ওজন মাপা হচ্ছে।

ট্রাকে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের সংগঠন লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাদেকুল ইসলামের ভাষ্য, ভারত থেকে পাথর আমদানির কারণে মধ্যপাড়ায় উত্তোলিত পাথর অবিক্রীত থাকছে। আগে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে যেত। বর্তমানে ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পাথর বিক্রি হচ্ছে।

এমজিএমসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. আবু তালেব ফারাজী প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রি বাড়াতে পাথরের দাম কমানোর একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকারি কাজে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার করতে বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এটি নিশ্চিত করা গেলে বিক্রি বাড়বে, মজুতের পরিমাণও কমে আসবে।

মধ্যপাড়ায় বর্তমানে ৫ থেকে ২০ মিলিমিটার (মিমি) পাথর প্রতি টন ২ হাজার ৯৩৮ টাকা, ২০ থেকে ৪০ মিমি ২ হাজার ৭৭০ টাকা এবং ৪০ থেকে ৬০ মিমি ২ হাজার ৬৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রতি টন পাথর ট্রাকে তোলার খরচ ৬০ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে শুল্কসহ এক টন পাথরের আমদানি খরচ পড়ছে গড়ে ২ হাজার ৫৬৮ টাকা।