Thank you for trying Sticky AMP!!

পাবর্ত্য চুক্তি সমস্যা সমাধানে চাই সহানুভূতি: দেবাশীষ রায়

রাজা দেবাশীষ রায়

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, পার্বত্য সমস্যাকে সামরিক ও নিরাপত্তার দৃষ্টিতে দেখার একটি প্রবণতা আছে, যেটা ভুল। তিনি এ-ও বলেছেন, আমলাতন্ত্রের অসহযোগিতায় চুক্তির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটা এমন একজন ব্যক্তি বললেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যিনি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছিলেন। অধ্যাপক মিজানের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত।

১৯৯৭ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং নির্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছিল। তাঁর বিচক্ষণতায় দুই দশকের সংঘাতের অবসান হয়েছিল। সেই চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান নেওয়া মানে প্রধানমন্ত্রীকেই অশ্রদ্ধা করা।

পার্বত্য চুক্তির সঙ্গে অন্যান্য চুক্তির আমরা তুলনা করতে পারি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের উদাহরণ তুলে ধরতে চাই। ওসব রাজ্যে জেলা বা অন্যান্য প্রশাসনিক-ভৌগোলিক ইউনিট আছে। ওই ইউনিটগুলোতে বিভিন্ন মাত্রার স্বায়ত্তশাসন আছে।

ত্রিপুরা, মিজোরাম বা মেঘালয় রাজ্যের স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদগুলোতে যতটুকু স্বায়ত্তশাসন আছে, ততটুকু স্বায়ত্তশাসন চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে নেই। ওসব রাজ্যের স্বশাসিত জেলা পরিষদগুলো কিছু নির্ধারিত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ তা পারে না।

ভারতের স্বায়ত্তশাসিত জেলাগুলোতে ‘নন-ট্রাইবাল’ কেউ ভোটে দাঁড়াতে পারেন না, ভোট দিতেও পারেন না। পার্বত্য চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা’ বলা হয়েছে। এরপরও এখানে জেলা ও আঞ্চলিক পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ আসন ‘অ-উপজাতীয়দের’ জন্য রাখা হয়েছে। পার্বত্য চুক্তিতে এত সামান্য পরিমাণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছে যে সেটাকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করা কি সংগত?

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, জনতাত্ত্বিক ইতিহাস দেশের অন্য অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। পার্বত্য চট্টগ্রাম মোগলের শাসনাধীন ছিল না। সাংবিধানিক আইনে সব সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ অঞ্চলের মর্যাদা পেয়েছে। সব রাষ্ট্রীয় আইন সেখানে প্রযোজ্য হয় না। আমাদের বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের রায়ও আছে। সেখানে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বিশেষ আইনি ব্যবস্থা আছে। আর পরোক্ষভাবে এর বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা রয়েছে।

পার্বত্য এলাকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে গত শতকের আশির দশকে বাঙালিদের নিয়ে আসা হয়েছে। জনসংহতি সমিতির নেতারা আমাকে বলেছেন যে চুক্তির আগে অলিখিত একটি চুক্তি হয়েছিল সরকারের সঙ্গে। চুক্তিতে রাষ্ট্রপতি জিয়া এবং এরশাদের আমলে স্থানান্তরিত বাঙালিদের সমতলে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয় ছিল।

এই সরকারের উচ্চস্তর থেকেও এখন বলা হয়েছে, ওই বাঙালিদের পাহাড়ে নেওয়া তৎকালীন সরকারের ভুল নীতি ছিল। এখন এসব মানুষ চাইলে সরকার সমতলে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারে। তবে অবশ্যই জোর করে না, তাদের সম্মতি নিয়েই করতে হবে।

মনের সংকীর্ণতা, পাহাড়ের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ইতিহাস না জানা বা জেনেও তাকে অবজ্ঞা করার চেষ্টার জন্যই আজকের সমস্যা চলছে। এ অঞ্চলের সমস্যাকে যদি সহানুভূতির দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখা হয়, তবে সমস্যার সমাধান হবে না। এ অঞ্চলের পরিবেশ, ভিন্ন ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের স্বার্থেই এখানে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য থাকতে হবে।

পার্বত্য চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করায় শুধু পাহাড়িদের না, বাংলাদেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে গণতন্ত্রের, ধর্মনিরপেক্ষতার। চুক্তি বাস্তবায়নে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা দীর্ঘজীবী হবে। আর তা হলে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাই নিশ্চিত হবে।

আরও পড়ুন:
চুক্তিতেই আটকে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি