Thank you for trying Sticky AMP!!

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের কোনো দ্বিধা নেই: গওহর রিজভী

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি: প্রেক্ষাপট ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন গওহর রিজভী। ছবি: প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই। এর দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি: প্রেক্ষাপট ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে গওহর রিজভী এ কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ২২ বছর পূর্তি হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার এই চুক্তি করে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে ৭২টি ধারা ছিল। এই ধারাগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার ও চুক্তি সম্পাদনকারী জেএসএস অবস্থানে অনেক ভিন্নতা আছে। সরকার বলছে, চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। অন্যদিকে জেএসএসের দাবি, এর মৌলিক বিষয়গুলোই অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। জেএসএস-প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা এ বছর চুক্তির বর্ষপূতির সময় অভিযোগ করেছেন, সরকার উল্টো পথে হাঁটছে।

তবে আজ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান, পার্বত্য চুক্তি দ্রুত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হোক। এখনো সমস্যা আছে, কিন্তু সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।

সমস্যা বলতে গওহর রিজভী পার্বত্য এলাকার ভূমির সমস্যাকেই তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ভূমি বিরোধ পাহাড়ের মূল সমস্যা। এর সমাধান করতেই হবে।’

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন হয়েছে। এর আইন দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকার পর তৈরি হয়েছে ২০১৬ সালে। তবে এর বিধিমালা এখনো হয়নি।

গওহর রিজভী বলেন, ‘বিধিমালা দরকার। খসড়া বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, এটি দ্রুত হয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমির পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কার্যকর ব্যবহারের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান।

চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করেন আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংও। তিনি বলেন, ‘চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই একটুও। কিন্তু এর সঙ্গে অন্য যারা আছে, তাদেরও সক্রিয় হতে হবে।’ নাম না নিলেও ‘অন্য’ বলতে চুক্তি সম্পাদনকারী জেএসএসকেই বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট। তবে আজকের অনুষ্ঠানে জেএসএস এবং আঞ্চলিক পরিষদেরও কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।

এ ধরনের অনুষ্ঠানে চুক্তির ফলে সৃষ্ট আঞ্চলিক পরিষদের উপস্থিতি যে বাঞ্ছনীয় ছিল, সে বিষয়টি উল্লেখ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনন্দ বিকাশ চাকমা। তিনি এ কথাও বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসম সাহসিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি জিয়া এবং এরশাদের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাহাড়ের মানুষকে ক্ষমতার অংশীদার করতে চেয়েছিলেন। এখন দৃষ্টি রাখতে হবে, জিয়া-এরশাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড যেন প্রাধান্য না পায়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য তিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কিছু মৌজার হেডম্যান। ছিলেন তিন পার্বত্য জেলার আওয়ামী লীগের নেতা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। তবে তিন সার্কেলের মধ্যে শুধু মং সার্কেলের প্রধান উপস্থিত ছিলেন। চাকমা ও বোমাং সার্কেলের প্রধান বা তাঁদের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।

অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম পার্বত্য চুক্তির পর থেকে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া নানা উন্নয়ন উদ্যোগের চিত্র তুলে ধরেন। সচিব বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের মাত্র দেড় বছরের মাথায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করতে সমর্থ হয়। এটি নিঃসন্দেহে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সফলতা ও দূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ।’
সচিব বলেন, ১৯৯৭-৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন বাজেট ছিল ৫৩ দশমিক ৮০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ সালে বরাদ্দ হয়েছে ১ হাজার ১৭ কোটি টাকা।

রাঙামাটির পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিং কিউ রোয়াজা নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, পার্বত্য জেলার প্রশাসনগুলো স্থানীয় জেলা পরিষদগুলোর প্রতি একধরনের বিদ্বেষ পোষণ করে।

মং সার্কেলের প্রধান সা চি প্রু বলেন, ‘সার্কেলপ্রধান হয়েও আমি জানি না, জেলা প্রশাসন কখন জমির বন্দোবস্ত দিয়ে দেয়। সার্কেলপ্রধানের অনুমতি ছাড়াই জেলা প্রশাসন কর আদায় করে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) পরিমল বিকাশ চাকমা, বান্দরবান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।