Thank you for trying Sticky AMP!!

পালিয়েও রক্ষা পাচ্ছেন না

‘রোহিঙ্গারাও নিজেদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুমাতে পারে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা নিজ ঘরে ঘুমাতে পারে না। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। দিন-রাত তাড়া করছে পুলিশ।’ নির্বাচনের পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে কথাগুলো বললেন গাজীপুর-৩ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ইকবাল সিদ্দিকী। পালিয়েও পুলিশের হাত থেকে নেতা-কর্মীরা রক্ষা পাচ্ছেন না বলে জানালেন গাজীপুরের বাকি চার আসনের প্রার্থীরা। গতকাল থেকে দিনেও শুরু হয়েছে গ্রেপ্তার।

গতকাল সোমবার থেকে সারা দেশের মতো গাজীপুরেও সেনাসদস্যরা টহল দিতে শুরু করেছেন রাস্তায় রাস্তায়। আস্থা পেয়ে পাঁচটি আসনেই প্রচারে নেমেছিলেন নেতা-কর্মীরা। তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রার্থীরা। গাজীপুর-৩ আসনের প্রার্থীর গাড়িবহরে বাধা দিয়েছে সরকারি দলের সমর্থকেরা। গাজীপুর-৫ আসনের প্রার্থীর প্রচারে হয়েছে হামলা। আর গাজীপুর-১ আসনে দুপুরবেলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তফসিলের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত গাজীপুরের পাঁচটি আসনে মামলা হয়েছে ২৬টি এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫৬ নেতা–কর্মী। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, প্রতি রাতেই নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। বিশেষ করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের খুঁজছে পুলিশ। নেতা-কর্মীদের বাড়িতে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করছে। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকে থাকতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা।

নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকার। ছলছল চোখে তিনি বললেন, ‘দীর্ঘ রাজনীতির পর এখন দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে নিজেকে অভিশপ্ত মনে হয়। এমন স্বপ্ন নিয়ে তো মুক্তিযুদ্ধে যাইনি। এমন নির্বাচন কেউ চায়নি।’

তবে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, হয়রানি করার জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মামলার আসামি বা কারও বিরুদ্ধে পরোয়ানা থাকলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

 গাজীপুর-১: দলীয় কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার

গাজীপুর-১ আসনে চারটি মামলা ও ৩২ জন গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দিন বিরতির পর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তানভীর সিদ্দিকী গতকাল সকালে প্রচারে নেমেছেন। এরপর দুপুরের দিকে কালিয়াকৈর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে পাঁচজন এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 গাজীপুর-২: প্রার্থী আত্মগোপনে, গ্রেপ্তারও বেশি

গাজীপুর-২ আসনে মামলা হয়েছে ১৩টি। এসব মামলায় ৯ শতাধিক আসামি আছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৮ জন। প্রার্থী সালাহ উদ্দিন সরকারের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় আত্মগোপনে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করছেন তিনি। সর্বশেষ গতকাল দুপুরে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলামকে তাঁর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 গাজীপুর-৩: প্রার্থীর প্রচারে বাধা

গাজীপুর-৩ আসনের প্রার্থী ইকবাল সিদ্দিকী প্রচারে নামার পর গতকাল সকালে মাওনা ইউনিয়নে তাঁর গাড়ির পথরোধ করে সরকারি দলের সমর্থকেরা। রাস্তা অবরোধ করে রাখলে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে প্রচারে যান তিনি। তবে কোনো ধরনের সংঘর্ষ হয়নি।

একটি মামলায় ৪৬ নেতা-কর্মী ও অজ্ঞাতনামা ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এখানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটিরি আহ্বায়ক ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম রুহুল আমিন।

ইকবাল সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, ‘সেনাসদস্যরা নামার পরও তাঁরা (সরকারি দলের সমর্থক) বেপরোয়া। এর আগে তো সরাসরি আমাকে বাধা দেয়নি। দিনে যারা আমার সঙ্গে থাকে, রাতে তাদের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ।’

 গাজীপুর-৪: আতঙ্ক কাটছে না

তফসিলের পর গাজীপুর-৪ আসনে তিনটি মামলা ও ১৫ জন গ্রেপ্তার হওয়ায় ঘটনা ঘটেছে। এখানকার সরকারদলীয় প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি নিজে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন, কোনো ধরনের বাধা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে পুলিশের অব্যাহত অভিযানের কারণে আতঙ্ক কাটছে না নেতা-কর্মীদের।

 গাজীপুর-৫: হামলায় আহত প্রার্থীর স্ত্রী

আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর তিন দিন পর গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন গাজীপুর-৫ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এ কে এম ফজলুল হক। গতকাল তাঁর স্ত্রী শম্পা হকের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনিসহ ১০–১২ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। শম্পা হককে ঢাকার কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।