Thank you for trying Sticky AMP!!

পিরামিড আকারের অনন্য স্থাপনা

মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত বৌদ্ধদের পিরামিড আকৃতির স্মৃতিস্তম্ভ l ছবি: সাইফুল ইসলাম

যেকোনো পাশ থেকে দেখলে স্থাপনাটিকে পিরামিডই মনে হবে। মিসর বা মেক্সিকোর পিরামিডের মতো ভাঁজে ভাঁজে খাঁজ কাটা নয়। এর দেয়ালগুলো ইটের তৈরি, মসৃণ ও সমান। উচ্চতাও অত বিশাল নয়, দুই স্তরের স্থাপনাটি দোতলা একটি ভবনের সমান হবে। মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর গ্রামে আট থেকে বারো শতকের কোনো এক সময়ে এটি বৌদ্ধদের স্মৃতিস্তম্ভ বা স্তূপ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। নকশার দিক থেকে একদম নতুন এই স্তূপসহ দেশের ইতিহাসে যোগ হওয়ার মতো বেশ কিছু স্থাপনা আবিষ্কৃত হয়েছে। এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক।

শুধু স্থাপত্য নকশা ও বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন হিসেবেই নয়, বিশ্বের বৌদ্ধ সভ্যতার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন বলে মনে করছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের দলটি। চন্দ্র, বর্ম ও সেন শাসকদের আমলে রাজধানী হিসেবে পরিচিত বিক্রমপুর এলাকার বজ্রযোগিনী গ্রাম ছিল বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রচারক অতীশ দীপংকরের জন্মস্থান। কিন্তু তিনি কোথায় বসে সাধনা করতেন, কোথায় ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন, তা ছিল অজানা। সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের দলটি অনুমান করছে, নাটেশ্বর গ্রামের এই স্থাপনা ছিল অতীশ দীপংকরের সেই সাধনার স্থান কিংবা ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র।

গতকাল শনিবার এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিল চীনের দুবার রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক চাই হুয়ান বোর নেতৃত্বে ১৮ জন চীনা প্রত্নতাত্ত্বিকের একটি দল। তাদের মতে, এটি পৃথিবীর অন্যতম স্তূপ। অগ্রসর বিক্রমপুর ও ঐতিহ্য অন্বেষার নেতৃত্বে পরিচালিত ওই গবেষণায় চীনের দলটিও কাজ করছে। তাদের দেশে অতীশ দীপংকরকে গৌতম বুদ্ধের পরেই সবচেয়ে সম্মানিত বৌদ্ধধর্মের প্রচারক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠার ইতিহাস খুঁজতে তারা এই গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গী হয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো তিনি ওই স্থাপনায় গেলেন। ২০১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া ওই খননকাজে এর আগে তিনি দুবার এসেছিলেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পিরামিড আকৃতির স্তূপ ছাড়াও নতুন করে তিনটি অষ্টকোনাকৃতি স্তূপ; ইটনির্মিত চারটি সড়ক, চারটি ছোট স্তূপ এবং হলঘর পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অষ্টকোনাকৃতির কেন্দ্রীয় স্তূপ পাওয়া গেছে। এসব দেখতে অর্থমন্ত্রী ছুটে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন।

অষ্টকোনাকৃতির কেন্দ্রীয় স্তূপটির সামনে চেয়ারে বসে অর্থমন্ত্রী স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে পান ১৯৫৬ সালে মহেঞ্জোদারোয় তাঁর সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন পরিদর্শনে যাওয়ার কথা। বলেন, ‘এটি বেশ পরিকল্পিতভাবে সাজানো ছিল। আমাদের এই স্থানকেও একইভাবে সাজাতে হবে, যাতে বিশ্বের মানুষ আমাদের প্রাচীন সভ্যতার এই নিদর্শন দেখতে আসে।’

এতগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন একসঙ্গে সবাইকে দেখাতে পেরে কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘টাকার অভাবে এমন গবেষণা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। দেশের প্রাচীন ইতিহাস বের করি, কিন্তু কষ্ট পাই যখন দেখি এগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় যেভাবে ওই খনন প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে, তেমনি এগুলো সংরক্ষণেও একইভাবে এগিয়ে আসবে।’