Thank you for trying Sticky AMP!!

পি-উ ডাকে পিউ পিউ

শিকারিদের কাছ থেকে কিনে চিত্রিত পি-উটিকে অবমুক্ত করা হয়েছিল ষ ছবি: শিহাবউদ্দিন

বাগেরহাটের মোল্লাহাটের বিল কোদালিয়া পাড়ি দেওয়ার পথে একটি ডাঙামতো জায়গায় উঠে দাঁড়াতেই একেবারে আমাদের নাকের ডগা থেকে ত্রস্তপাখায় উড়াল দিল ২০-২২টি ‘চ্যাগা’র একটি দল। ডাকছে পিউ পিউ স্বরে। জঙ্গি বিমানের মতো একই সঙ্গে দিক বদল করছে, ওপর-নিচ করছে ও পাক খাচ্ছে আমাদের মাথার ওপর দিয়ে। মাঘের শেষ বিকেলের বাঘের চোখের রঙের রোদ্দুরে ওদের শরীর যেন ঝলকাচ্ছে। টলটলে জলের তলায় পুঁটিমাছের ঝাঁক ভয় পেয়ে দৌড় দিলে এ রকম ঝলকই বুঝি দেখা যায়! এই তো, কিছুক্ষণ আগে চিতলমারী বাজারে দেখে এসেছি এমন তিনটিকে। হাওরের ফাঁদে বন্দী হয়ে বাজারে উঠেছিল ওরা মানুষের রান্নাঘরে যাওয়ার জন্য। অবশ্য বছর কয়েক ধরে বন বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা বিভাগ কৌশলে পাখি বিক্রেতাদের ধরছে ও দণ্ড দিচ্ছে। পাখি বিক্রেতারা তাই খুব হুঁশিয়ার হয়ে তাদের কারবার চালাচ্ছে।
বাগেরহাট সদরের কার্তিকদিয়া বাজারে পৌঁছালাম আমরা। ক্যামেরা লুকানো ব্যাগে। শীতের পাখি কেনাবেচার জন্য বিখ্যাত এই বাজারে আমরা এখন পাখিক্রেতা। চিতলমারী থেকে কার্তিকদিয়া এসেছি। আমার বাড়ি ফকিরহাটে। না, কোনো পাখি নেই এই হাটে। অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষণ পর এক বিক্রেতা এল হাতে পাঁচটি পাখি ঝুলিয়ে নিয়ে। দেখেই অন্য রকম একটা অনুভূতি হলো আমার, কিছুক্ষণ আগে যে ২০-২২টি চ্যাগার ডানার ঝিলিক দেখে এসেছি আমরা, এগুলো সেই চ্যাগাই।    
গত বছর যে চ্যাগাদের ডানার ঝিলিক দেখেছিলাম আমরা, সেটির নাম ‘চিত্রিত পি-উ’। ইংরেজি নাম Spotted Redshank। বৈজ্ঞানিক নাম Tringa erythropus।               মাপ ৩৩ সেন্টিমিটার। পরিযায়ী পাখি এটি। আমাদের দেশে বাসা করে না। প্রজনন ঋতুতে রং হয় কালো, পিঠ-ডানা ও লেজের উপরিভাগে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সাদা ছিট থাকে অসংখ্য। পা হয় আলতা-লাল। এমনিতে বুক-পেট সাদা, কপাল-মাথা-ঘাড় ছাই-বাদামি, পিঠ চকচকে ছাই-ধূসর, তার ওপর অসংখ্য সাদাটে ছিট-ছোপ। লম্বা পা, পায়ের রং কমলা-হলুদ, লম্বা নলাকার ঠোঁটের গোড়া লাল, বাকিটা কালচে ধূসর। চোখের ওপর দিয়ে আছে চওড়া সাদা একটি টান। লেজের গোড়ার উপরিভাগ সাদা। লেজের আগার দিকের ওপরে সুবিন্যস্তভাবে সাদা ও কালো রেখা আড়াআড়িভাবে টানা। পালকের উপরিভাগের পেছন দিকে সাদা সাদা ছোট ছোট চৌকো ছোপ আঁকা।

মূল খাদ্য এদের কুচোমাছ, ব্যাঙাচি, জলজ পোকা-পতঙ্গ-লার্ভা-সুতোপোকা ইত্যাদি। ছোট গুগলি শামুকও খায়। জোড়ায় চলে, ছোট দলে চলে আবার বড় দলেও চলে। ভালো সাঁতার জানে। লম্বা ঠোঁট জলের তলার কাদায় সেধিয়ে দিয়ে সামনে-পেছনে ও ডানে-বাঁয়ে চালাতে ওস্তাদ। প্রয়োজনে ডুবও দেয়। এক পায়ে ভর করে ঘুমায়-ঝিমায়। চতুর-সতর্ক এই পাখি হাওর-বিল-মাঠ-ঝিলসহ উপকূলেও চরে।

প্রতি মৌসুমে বাগেরহাট-ফকিরহাটের উত্তরের হাওরে এরা জাল-ফাঁদে পড়ে। বিক্রি হয় হাটবাজারে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে জাল-ফাঁদ যেমন পড়বে না হাওরে, তেমনি বিক্রিও হবে না হাটবাজারে। হ্যাঁ, চিতলমারীর তিনটি চিত্রিত পি-উ এবং কার্তিকদিয়ার পাঁচটি পি-উকে আমরা অবমুক্ত করেছিলাম। দুটি ক্ষেত্রেই পাখিগুলো উড়ে গিয়েছিল আবার হাওরের দিকেই। তাহলে লাভ কী? আবারও তো নামবে ওরা হাওরে, আবারও পড়বে জাল-ফাঁদে। সে জন্যই জাল-ফাঁদ গুটিয়ে ফেলা জরুরি।