Thank you for trying Sticky AMP!!

পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসএফ

ফেলানী হত্যা

বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানী হত্যা মামলা পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল শুক্রবার দিল্লি থেকে বিএসএফ সদর দপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ফেলানী হত্যার বিষয়ে সম্প্রতি বিশেষ আদালতের রায় আইন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। বিএসএফের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আদালতের রায়ের সঙ্গে একমত হতে না পারায় মামলাটি পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’রায় পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা-মা।কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কিশোরী ফেলানী খাতুন ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। দেশে ফেরার সময় অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের জওয়ান অমিয় ঘোষ গুলি করে হত্যা করে ফেলানীকে।পরে অমিয় ঘোষ ফেলানীকে গুলি করার কথা স্বীকার করেন। অথচ ওই হত্যার বিচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে পরিচালিত বিএসএফের একটি বিশেষ আদালত ‘নির্দোষ’ হিসেবে সাব্যস্ত করেন অমিয় ঘোষকে। বিএসএফের মহাপরিচালক (বিশেষ-পূর্ব) বি ডি শর্মা গতকাল প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, ফেলানী হত্যার রায় অনুমোদনের জন্য তাঁর কাছে পাঠানো হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে রিভিশনাল ট্রায়েলের (পুনর্বিচার) নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে বিএসএস সদর দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএসএফের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফেলানী হত্যার রায়ের রিভিশনাল ট্রায়েলের (পুনর্বিচার) সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চৌধুরীহাট ক্যাম্পের কাছে বিএসএফের ১৮১ ব্যাটালিয়নের জওয়ান অমিয় ঘোষের গুলিতে ফেলানী খাতুন প্রাণ হারায়। বাংলাদেশের কিশোরীকে হত্যার অভিযোগে বিএসএফ আইন, ১৯৬৮-এর ৪৬ ধারা অনুযায়ী অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে (জিএসএফসি) বিচার পরিচালিত হয়।’

বিএসএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই আদালত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে ৬ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন। বিএসএফ আইন অনুযায়ী ওই রায় বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হয়। বিএসএফের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই রায়ের সঙ্গে একমত হতে না পারায় মামলাটি পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানতে চাইলে ফেলানী হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আব্রাহাম লিংকন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএসএফের এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে ফেলানী হত্যার বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার হয়নি। তবে বিএসএফের সর্বশেষ পদক্ষেপে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হলো।

আব্রহাম জানান, বিএসএফ আইনের ১০৫ ধারা অনুযায়ী এখন বিচারের প্রক্রিয়ায় আসামিকে জেরা করার সুযোগদান সাপেক্ষে নতুন করে সাক্ষী নেওয়ার সুযোগ থাকবে। আর এ বিচারকাজ একই বিচারকমণ্ডলীর মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গত রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, ফেলানী হত্যার পুনর্বিচারের প্রক্রিয়া এখন তিনজনের নতুন একটি বিশেষ আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক শুরুর এক দিন আগে বিএসএফ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনে যোগ দিতে বিএসএফের মহাপরিচালক সুভাষ যোশী আজ শনিবার ঢাকায় আসছেন।

বাবা-মা খুশি: নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম জানান, ফেলানী হত্যা মামলা পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম। গতকাল নিজ বাড়িতে নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা আনন্দিত। আশা করি ন্যায়বিচার পাব।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অমিয় ঘোষের ফাঁসি চাই। কারণ, সে নিজে গুলি করে আমার মেয়েকে হত্যা করার কথা আদালতেও স্বীকার করেছে। আমরা ভারতের আদালতে গিয়ে সত্য ঘটনার বিস্তারিত সাক্ষ্য দিয়েছি। ন্যায়বিচারের পাশাপাশি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।’ জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমি ন্যায্য বিচার চাই। রায় পুনর্বিচারের নামে আমাদের যেন ধোঁকা দেওয়া না হয়।’