Thank you for trying Sticky AMP!!

পুরান ঢাকায় ত্রিমুখী সংকট

পুরান ঢাকার নারিন্দার ফকিরচাঁন সরদার কমিউনিটি সেন্টারে এক পাশে প্রায় ২০টি ওয়েস্ট বিন স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
তিন-চার ঘণ্টার বেশি চুলা জ্বলছে না। ওয়াসার পানিতে ময়লা আর দুর্গন্ধ। লোডশেডিং না থাকলেও বিভ্রাটের কারণে যখন-তখন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।


পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের ত্রিমুখী সংকট চলছে। দিনে–রাতে তিন-চার ঘণ্টার বেশি চুলা জ্বলছে না। কলে আসা ওয়াসার পানি ময়লা আর দুর্গন্ধের জন্য পান করা যায় না। আবার লোডশেডিং না থাকলেও বিভ্রাটের কারণে যখন-তখন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এ সমস্যার কথা জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সূত্রমতে, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বন্ধ হয়ে জাতীয় গ্রিডে সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার পর ৪ নভেম্বর থেকে রাজধানীতে গ্যাসের সরবরাহ কমে যায়। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে পুরান ঢাকায়। ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ আসে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি শোধনের অযোগ্য বলে। চাঁদনীঘাট শোধনাগার থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পানি সরবরাহ হয়। পুরোনো পাইপলাইন ফুটো হয়ে যাওয়ায় ময়লা ঢোকে। বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে সঞ্চালন-বিতরণ লাইনের দুর্বলতার কারণে।

তাঁতীবাজার গোয়াল নগরের বাসিন্দা ধনঞ্জয় পাল জানালেন বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংকটের ফলে জীবনযাত্রার কষ্টের কথা। স্থানীয় অন্তত পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরান ঢাকায় যারা বসবাস করে, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সরবরাহকারী সেবা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তারা কখনোই যথাযথ সেবা পায় না। তারপরও বর্তমানে যে দুর্ভোগ চলছে, তা মাত্রাছাড়া। ছয় দিন ধরে দিনে চুলা জ্বলে না। গভীর রাতে গ্যাস আসে। সকাল সাতটার পর আর থাকে না। বাড়িতে ওয়াসার যে পানি সরবরাহ হয়, তা ময়লা ও দুর্গন্ধে ভরা। অথচ সে পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎও মাঝেমধ্যেই চলে যায়।

তাঁতীবাজারের পাশের রাধিকামোহন বসাক লেনে আটটি খাবার হোটেল রয়েছে। গতকাল সকাল দশটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, সব হোটেলেই খাবার সংগ্রহের জন্য ভিড় করেছেন এলাকাবাসী। বাবুল হোটেলে বড় দুটি সিলিন্ডারের গ্যাসে খাবার তৈরি হচ্ছে। পরোটা ভাজা শেষ হতেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আসা ক্রেতা সুমন সাহা বললেন, গ্যাসের সমস্যার কারণে বাসায় রান্না বন্ধ। হোটেল থেকে প্রতিদিন প্রায় হাজার টাকার খাবার কিনতে হচ্ছে।

তাঁতীবাজারের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী সুজন মাহমুদ বলেন, গ্যাসের জন্য প্রতি মাসে বাড়িওয়ালাকে আট শ টাকা করে দিতে হয়। কিন্তু দিনে–রাতে চার ঘণ্টাও চুলায় আঁচ থাকে না। খাবার কিনতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। গ্যাসের একই সমস্যা চলছে রাজার দেউড়ি, লক্ষ্মীবাজার, ফরাশগঞ্জ, মালাবার টোলা, এস কে দাস রোড, গেন্ডারিয়ার অক্ষয় দাস রোডসহ বেশির ভাগ এলাকায়।

তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকায় অন্য সময়ের তুলনায় কমপক্ষে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। পুরান ঢাকায় সরু পাইপলাইনের কারণেও সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।

বিশুদ্ধ পানির সমস্যাও রয়েছে এসব এলাকায়। দেখা গেল, রাধিকামোহন বসাক লেনের হোটেলগুলোতে কলসিতে করে পানি সরবরাহ করছেন ঠিকা কাজের লোকেরা। কারণ, সেখানে ওয়াসার কলে দুর্গন্ধভরা পানি আসছে। কলসি দিয়ে পানি আনছিলেন অমূল্যের মা। তিনি বলেন, প্রতি কলসির জন্য ১৫ টাকা করে পান। কিন্তু এই পানি সংগ্রহের জন্য রাজার দেউড়ি পাম্পে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

রাজার দেউড়ি পাম্পে গিয়ে দেখা যায়, পানি সংগ্রহের জন্য কলসি, বালতি, জার নিয়ে হাজির হয়েছেন অনেকে। পানিটোলায় পানির কল থেকেও পানি সংগ্রহ করছেন বাসিন্দারা।

শাঁখারীবাজারের পাশে পানিটোলায় সিডি–ডিভিডির দোকান সুদেব ঘোষের। তিনি বলেন, পানি ও গ্যাসের সমস্যা তো আছেই, যখন-তখন বিদ্যুৎও চলে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও বিদ্যুৎ গেছে। অথচ স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, এলাকায় লোডশেডিং নেই।

সেখানে উপস্থিত পাটুয়াটুলীর ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ বলেন, পাটুয়াটুলীতে দিনে তিন–চারবার বিদ্যুৎ চলে যায়। তিনি বসবাস করেন ওয়ারিতে। সেখানেও কোনো ঘোষণা ছাড়া বিদ্যুৎ যাওয়া–আসার ঘটনা ঘটছে।