Thank you for trying Sticky AMP!!

পেয়ারার ভাসমান হাট

নৌকায় চলছে পেয়ারা কেনাবেচা। পিরোজপুরের নেছারাবাদের জিন্দাকাঠি হাট থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ছবিটি তুলেছেন সাইয়ান

পিরোজপুরের কুড়িয়ানার পেয়ারার খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। বাংলার আপেলখ্যাত সুমিষ্ট পেয়ারা উৎপাদনের কারণে কুড়িয়ানা পরিচিতি পেয়েছে ‘পেয়ারার গ্রাম’ হিসেবে।
জেলার নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব দিকে আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের গ্রামগুলোসহ পাশের জলাবাড়ি ও সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের মোট ২২টি গ্রামের ৮৫০ হেক্টর জমিতে রয়েছে ২ হাজার ২৫টি পেয়ারার বাগান। শুধু কুড়িয়ানা গ্রামে ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এখানকার মানুষের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস পেয়ারা। শত বছর ধরে গ্রামগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ করা হচ্ছে।
নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠি, ভীমরুলী, আদমকাঠি, ধলহার খালে পেয়ারার মৌসুমে প্রতিদিন ভাসমান হাট বসে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা হাটে পেয়ারা কিনতে আসেন। প্রতিদিন হাটগুলোতে ১০ থেকে ১৫ হাজার মণ পেয়ারা বেচা-কেনা হয়।
আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা চাষ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে পাশের এলাকাগুলোতে। ঝালকাঠি সদর উপজেলা ও বরিশালের বানরীপাড়া উপজেলার ১২ থেকে ১৪টি গ্রামে পেয়ারার চাষ হয়। এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে পেয়ারার ১৫-২০টি ছোট-বড় ব্যবসাকেন্দ্র।
আটঘর গ্রামের পেয়ারা ব্যবসায়ী শহিদ মল্লিক বলেন, নেছারাবাদ উপজেলায় ১ হাজার ২৫০ জন পেয়ারা চাষির নিজস্ব বাগান রয়েছে। এ ছাড়া পেয়ারা চাষাবাদ ও বিপণনব্যবস্থায় জড়িত রয়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার শ্রমজীবী মানুষ।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নেছারাবাদে খালের মধ্যে অনেকগুলো ভাসমান হাট। ঝালকাঠি ও নেছারাবাদের আটঘর, কুড়িয়ানা, মাহমুদকাঠি, জলাবাড়ি, অলংকারকাঠিসহ বিভিন্ন গ্রামের বাগান থেকে চাষিরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় পেয়ারা বোঝাই করে হাটে আসছেন। হাটগুলোতে ব্যবসায়ীরা পেয়ারা কিনে ট্রলারযোগে ও ট্রাকে করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর, নোয়াখালী, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। হাটে প্রতি মণ পেয়ারা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পেয়ারাচাষিরা জানান, পেয়ারা সংগ্রহের শুরুর দিকে তাঁরা এক মণ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
আটঘর গ্রামের পেয়ারাচাষি মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পেয়ারা চাষের গ্রামগুলোর সঙ্গে হাট-বাজারের সড়কপথে যোগাযোগের রাস্তাঘাট বর্ষাকালে কর্দমাক্ত থাকে। এ কারণে নৌপথে ছোট নৌকায় আমরা পেয়ারা পরিবহন করি।’
ঝালকাঠির সদর উপজেলার মনির হোসেন বলেন, ঝালকাঠির বিভিন্ন গ্রামের বাগান থেকে পেয়ারা কিনে নৌকায় করে আটঘর হাটে বিক্রি করেন। তাঁর মতো কয়েক শ পেয়ারাচাষি ও মৌসুমি ব্যবসায়ী প্রতিদিন আটঘর হাটে চার থেকে পাঁচ হাজার মণ পেয়ারা বেচা-কেনা করেন।
আটঘর ও কুড়িয়ানা হাটে কয়েকজন পেয়ারা চাষি বলেন, অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ ও পেয়ারা সংরক্ষণের কোনো হিমাগার না থাকায় চাষিরা পেয়ারা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। সড়ক যোগাযোগ উন্নত হলে দ্রুত পেয়ারা বাজারজাত করা যেত।
নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. অহিদুজ্জামান বলেন, ‘পেয়ারা পরিবহন, বিপণন ও সংরক্ষণের সুব্যবস্থা হলে চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। সরকারের কাছে আমাদের দাবি হলো, পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার নির্মাণ করা হোক।’