Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। পাশে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক অমর চান বণিক। ছবি: প্রথম আলো

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় শক্তি এখন পোশাকশিল্প খাত। এ খাতের শ্রমিকদের বেশির ভাগই নারী। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা পিছিয়ে আছেন। অথচ বিদ্যমান আইনি কাঠামোতেই কারখানাগুলোতে চিকিৎসক ও নার্স থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেবার পরিধি খুবই অপ্রতুল। এই অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার, কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাসহ সব পক্ষকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।

‘পোশাকশ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণে শ্রম আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনদের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। প্রথম আলোর উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠকে সহযোগিতা দেয় নেদারল্যান্ডসের উন্নয়ন সংস্থা এসএনভি।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

মুজিবুল হক বলেন, পোশাকশিল্পের প্রথম পর্যায়ে যে যেভাবে পেরেছেন ভাড়াবাড়িতে, চিপাচাপায় কারখানা গড়ে তুলেছেন। নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের বিষয়গুলোতে মালিকদের তখন তেমন কোনো ধারণা ছিল না। এখন এ বিষয়গুলো মেনে মানসম্মত কারখানা হচ্ছে। পুরোনো কারখানাগুলোও উন্নত হচ্ছে, সেগুলোর মান আরও বাড়াতে হবে।

সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, সরকার, মালিক, শ্রমিক মিলে শিল্পের স্বার্থে যা যা করা দরকার, তা করা হবে। শ্রমিক বা মালিক—কোনো পক্ষই পরস্পরকে দোষারোপ করে লাভবান হবে না। আবার সরকারও এই দুই পক্ষের কাউকেই দোষারোপ করে লাভ পাবে না। তিনি বলেন, সমস্যা আছে। আইনেই অনেকগুলোর সমাধান আছে। এ জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসএনভির জ্যেষ্ঠ এসআরএইচআর (যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা)বিশেষজ্ঞ খালেদ আহমেদ। এতে বলা হয়, দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা নারীরা পোশাক খাতে যুক্ত হওয়ার পর তাঁদের বিয়ের গড় বয়স ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলেও স্বাস্থ্যসেবা তথা যৌন ও প্রজনন-স্বাস্থ্যের তেমন উন্নতি হয়নি। তবে আশার কথা, পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা বাস্তবায়ন একটি সফলতম উদ্যোগ।

বৈঠকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক (যুগ্ম সচিব) অমর চান বণিক বলেন, কলকারখানা পরিদর্শনের ১২৫টি প্রশ্নের (চেকলিস্ট) মধ্যে ১৩টি স্বাস্থ্যসম্পর্কিত। পোশাক কারখানায় কোনো সমস্যা হলে ১৬৩৫৭ হটলাইন নম্বরে তা জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারীর প্রতি সহিংসতা দমনবিষয়ক প্রকল্পের পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, অনেক মালিক তাঁদের কারখানায় ঢুকতে দেন না, দিলেও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেন না।

কমপ্লায়েন্ট (নিরাপদ কর্মপরিবেশ) কারখানাগুলোর শ্রমিকদের অনেকে শ্রম আইন সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন না বলে মন্তব্য করেন এসএনভির টিম লিডার ফার্থিবা রাহাত খান। তিনি বলেন, আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটাও বড় সমস্যা। শ্রমিকদের ইনস্যুরেন্সের আওতায় আনা, প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া ভিন্টেজ ডেনিম কারখানার শ্রমিক কানন বলেন, তাঁদের কারখানায় স্বাস্থ্য কার্ড ও শ্রমিকদের ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া নারী শ্রমিকেরা চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। ছুটিতে যাওয়ার সময় তাঁদের দুই মাসের বেতন অগ্রিম দেওয়া হয়। ছুটি থেকে ফিরলে বাকি দুই মাসের বেতন দেওয়া হয়। তবে সব কারখানার শ্রমিকেরা এই সুযোগ পান না।