Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রথমবার সাংসদ ৬ ব্যাংক পরিচালক

>

নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ১৭ জন ব্যাংক পরিচালক এবার আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার ৬ জন ব্যাংক পরিচালক প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জন আওয়ামী লীগ থেকে এবং ১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর বাইরে ব্যাংকের আরও ১১ পরিচালক এবার সংসদ সদস্য হয়েছেন, যাঁরা এর আগেও সাংসদ ছিলেন। সেই হিসাবে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ১৭ জন ব্যাংক পরিচালক এবার আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

সাংসদ নির্বাচিত হওয়া ১৭ জন ব্যাংক পরিচালকের মধ্যে ১৫ জন বেসরকারি ব্যাংকের আর ২ জন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালক। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো সাংসদ হয়ে ব্যাংক খাতে আলোচনায় এসেছেন সালমান এফ রহমান। তিনি আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতির বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা। এ ছাড়া সাবেক সচিব ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেনও এবার প্রথমবারের মতো সাংসদ হয়েছেন। এ তালিকায় আরও আছেন নিটল নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও জনতা ব্যাংকের পরিচালক সেলিমা আহমাদ, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক এনামুল হক শামীম, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক আনোয়ার হোসেন খান ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম। তাঁদের মধ্যে শহীদ ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তাঁকে পূর্ণ সমর্থন দেয় মহাজোট। এ ছাড়া অন্যরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন।

ব্যাংক পরিচালকদের সাংসদ হওয়াকে কীভাবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংক পরিচালক ও সাংসদ দুটো পদে দায়িত্ব পালন একই সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে না। কারণ, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন একজনকে দিয়ে হয় না। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক পরিচালকেরা ধনিক শ্রেণি হিসেবে ইতিমধ্যে প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন। এখন সাংসদ হওয়ায় প্রভাব আরও বেড়ে যাবে।

ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর কোনো নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন না। এখন ব্যাংক পরিচালকেরা সাংসদের পদ ব্যবহার করে গভর্নরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। কারণ, অতি ধনিক রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করা যায় না।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, পুরোনোদের মধ্যে এবারও সাংসদ হয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ এন আশিকুর রহমান, যমুনা ব্যাংকের পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী ও তাজুল ইসলাম, এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক আবদুল মান্নান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও বি এইচ হারুন, মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক শেখ ফজলে নূর তাপস ও দিদারুল আলম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক মোর্শেদ আলম।

জানা গেছে, বিএনপি থেকেও বেশ কয়েকজন ব্যাংক পরিচালককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে তাঁদের কেউ জিততে পারেননি। আবার দুই দল থেকে অনেক ব্যাংক পরিচালক মনোনয়ন চেয়েও পাননি।

গত কয়েক বছরে নানা কারণে আলোচনায় ব্যাংক খাত। এর মধ্যে এক ফারমার্স ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে না পারায় বেশির ভাগ ব্যাংকের আমানতে টান পড়ে। তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হয়। এর মধ্যেই ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশনা আসে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। ব্যাংক পরিচালকেরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নানাবিধ সুবিধা আদায় করে নেন। আর আমানতকারীদের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে সরকার, ব্যাংকের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক হাতে হাত মেলায়।

জনতা ব্যাংকে অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ জালিয়াতি আলোচনায় নতুন মাত্রা দেয়। ফলে গত বছরের ৯ মাসেই (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ব্যাংকের এত পরিচালক সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় তা এ খাতের জন্য ভালো। এখন এ খাতে যেসব সমস্যা ও অনিয়ম ধরা পড়েছে, তা সমাধান করতে এসব সাংসদ ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন।