Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রথম দিনেই উপচে পড়া ভিড়

বাসের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের জন্য যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল গাবতলী বাস টার্মিনালে। ছবিটি গতকাল সকালে তোলা ষ সাজিদ হোসেন

ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য একযোগে ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রথম দিনেই টিকিট কাউন্টারগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও লাইনের শেষ প্রান্তে থাকা অনেকেই টিকিট পাননি।
বরাবরই ঈদের সময় মহাসড়কে যানজট, দুর্ঘটনা ও পথে নানা ভোগান্তির কথা চিন্তা করে রেলের টিকিটের প্রতিই নগরবাসীর ঝোঁক বেশি থাকে। এবারও একই দৃশ্য দেখা গেছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল সকাল নয়টায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যারাতেই কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইন ধরে বসে পড়েন অনেকে। কেউ কেউ লাইনে দাঁড়ান সেহিরর পর। সকাল নয়টায় টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই প্রতিটি কাউন্টারের সামনের অপেক্ষমাণ লোকদের সারি সাপের মতো পেঁচিয়ে স্টেশন প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে পাশের সড়কে গিয়ে ঠেকে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০ জুলাই পর্যন্ত রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪ আগস্ট যাত্রার অগ্রিম টিকিট। আজ শনিবার বিক্রি হবে ৫ আগস্টের টিকিট। এরপর ২৮ জুলাই ৬ আগস্টের, ২৯ জুলাই ৭ আগস্টের ও ৩০ জুলাই ৮ আগস্টের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে।
এদিকে বাসে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও গতকাল তা সীমাবদ্ধ ছিল বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানির কল্যাণপুর, গাবতলী, কলাবাগান, মালিবাগের কাউন্টারগুলোতে। যাত্রীদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, কিছু কিছু কাউন্টারে বিক্রি শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে বলা হয়েছে টিকিট শেষ। শেষের দিকে কালোবাজারে বিক্রি করার লক্ষ্যেই এটা করা হয়েছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। গাবতলীতে টিকিট কিনতে আসা অনেকেই বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন।

তবে লঞ্চে অগ্রিম টিকিট সেভাবে বিক্রি হয় না। সাধারণত কেবিনের টিকিট আগে থেকে সংগ্রহ করা হয়। ঈদ উপলক্ষেও একইভাবে কেবিনের টিকিট সংগ্রহের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।

ট্রেন: রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে ৪ আগস্ট ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে এবার প্রতিদিন ৪৭টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। সব কটি ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে প্রতিদিন ৬০ হাজার যাত্রী যাওয়ার সুযোগ পাবে। এর পরও গতকাল অনেকে অগ্রিম টিকিট পাননি। অনেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ বা উচ্চ শ্রেণীর টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সাধারণ শ্রেণীর টিকিট কিনতে বাধ্য হয়েছেন।

গাইবান্ধায় যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট পেতে বৃহস্পতিবার রাতে কমলাপুর রেলস্টেশনে লাইনে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল আমিন। তিনি বলেন, শোভন চেয়ারের টিকিট চেয়ে পাননি। পরে শোভন সাধারণ শ্রেণীর টিকিট নিয়েছেন।

শুরুতেই কেবিন ও প্রথম শ্রেণীর টিকিট শেষ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রেলের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সরদার সাহাদাত আলী প্রথম আলোকে বলেন, এক-একদিন সব কটি ট্রেন মিলিয়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) আসন ও বার্থ (শুয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা) আছে মাত্র এক হাজার ৮০২টি। এর মধ্যে মুঠোফোনে এসএমএস ও ই-টিকিটের জন্য কিছু বরাদ্দ থাকে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি) ও রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কিছু বরাদ্দ থাকে। তাই চাহিদার তুলনায় আসন সীমিত বলে লাইনের শুরুর দিকের লোকেরাই কেবল এসব টিকিট পাচ্ছেন।

রেলওয়ের মহাপরিচালক আবু তাহের গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে আসেন। প্রথম শ্রেণীর আসন শেষ হওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কেবিন ও এসি প্রথম শ্রেণীর টিকিট সীমিত হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে এত দ্রুত শেষ হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

টিকিট দিতে ধীরগতি: কাউন্টার থেকে ধীরগতিতে টিকিট দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন লাইনে অপেক্ষমাণ অনেকে। লিমন নামে অপেক্ষমাণ একজন বলেন, লাইনে দাঁড়ানোর পর স্টেশন থেকে একটি চাহিদাপত্র দেওয়া হচ্ছে। এতে যাত্রীর তথ্য লিখে টিকিট কাটার সময় কাউন্টার জমা দিতে হচ্ছে। এর পরও টিকিট দিতে অনেক দেরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক খায়রুল বশীর প্রথম আলোকে বলেন, এক-একটি টিকিট দিতে বেশ কিছু প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়। তাই একটু সময় লাগতেই পারে।

বাস: গতকাল সকাল সাড়ে সাতটায় গাবতলীতে এস আর পরিবহনের টিকিট বিক্রির কাউন্টারের তালা খোলা হয়, ততক্ষণে ওই কাউন্টারের সামনে টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। ছয়-সাত ঘণ্টা আগে থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়ানো শুরু করেন বলে জানান গাইবান্ধার রায়হানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেহিরর পর রায়েরবাজারের বাসা থেকে রওনা হই। ভেবেছিলাম, আমি সবার আগে দাঁড়াব। কিন্তু গাবতলী এসে শুনি, লাইনের প্রথম মানুষটি রাত একটায় এসে দাঁড়িয়েছেন।’

যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ঢাকা-গাইবান্ধার ৪৮০ টাকার টিকিট ঈদ উপলক্ষে বিক্রি করা হচ্ছে ৫২০ টাকায়।

তবে এস আর পরিবহনের ওই কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. আলাল এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, তাঁরা বিআরটিএর নির্ধারিত মূল্যে টিকিট বিক্রি করছেন।

গাবতলীতে সিরাজগঞ্জ ও পাবনাগামী আল-হামরা পরিবহনের কাউন্টারের সামনেও দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সেখানেও যাত্রীরা বাড়তি দামে টিকিট বিক্রির অভিযোগ করেন। খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরাগামী পরিবহনগুলোর কল্যাণপুরে কাউন্টারগুলোতেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গতকাল পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়নি।