Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রবীণ অধ্যাপককে লাঞ্ছনা: ইউএসটিসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

প্রথম আলো ফাইল ছবি।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা মাসুদ মাহমুদকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁকে লাঞ্ছিত করার পেছনে শিক্ষার্থীদের ৮-১০ জন জড়িত থাকলেও কেবল একজনকে আসামি করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাসে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে লাঞ্ছিত করার সময় ওই শিক্ষার্থীদের একজন ভিডিও করেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ধীর পায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের দিকে এগোচ্ছেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। তাঁর পিছু নিয়েছে শিক্ষার্থীদের ৮-১০ জনের একটি দল। তাঁদের মধ্যে একজন সমস্বরে অন্যদের বলে যাচ্ছিলেন, ‘এই তোরা ধর না। ধরে ধাক্কা দে।’ এরপর দুজন পেছন থেকে প্রবীণ এই অধ্যাপককে ধাক্কা দেন। এ সময় মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে আড়াল করার চেষ্টা করলে তাঁর ওপরও ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষার্থীদের মাঝেই ছিলেন অধ্যাপকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া মাহমুদুল আলম। 

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, কিছু শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস না করায় তাঁদের পরীক্ষা দিতে দেননি অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। এ ছাড়া দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকা কয়েকজন শিক্ষকের চাকরিচ্যুতির পেছনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এরপর এপ্রিলের শুরুতে কিছু শিক্ষার্থী অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে ‘অপ্রাসঙ্গিকভাবে’ যৌনতার বিষয় তুলে ধরে পক্ষান্তরে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ আনেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ৩ মে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি ১৬ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটি অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ পায়নি।

অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ার পরও যারা মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের সাবেক কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকেরা। এই বিভাগের সভাপতি মাইনুল হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু আমি না, আমার সব সহকর্মীর বক্তব্য হলো, ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ তদন্ত করেই বলেছিল অভিযোগের প্রমাণ পায়নি। ওই সময় যদি মিথ্যা অভিযোগ তোলা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে এ রকম ঘটনা ঘটত না। আর ঘটনাটি ঘটেছে ক্যাম্পাসের ভেতরেই। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ওই শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। জড়িত সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষ্য

একজনকে আসামি করার বিষয়ে খুলশী থানায় করা মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, মাহমুদুল আলম নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তাই তাঁকে আসামি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি জড়িত অন্যদের খুঁজে বের করবে। কেউ পার পাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকাসহ নানা কারণে দেড় মাস আগে মিথ্যা অভিযোগ তোলা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান দিলীপ কুমার বড়ুয়া। তিনি বলেন, সম্প্রতি নতুন উপাচার্য যোগ দিয়েছেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই ঘটনা ঘটে গেছে।

তবে নিজ উদ্যোগে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা বলেছেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাজ তো ক্লাস করানো। যা করার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করবে।’

ইন্ধনদাতাদেরও আইনের আওতায় আনার নির্দেশ উপমন্ত্রীর

অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়ার ঘটনায় ইন্ধনদাতাদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে যারা এ ঘটনায় জড়িত, তদন্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করতে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানকে মুঠোফোনে নির্দেশনা দেন। গত ২৫ এপ্রিল মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যান নগর ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের ওই অংশ শিক্ষার্থীদের ইন্ধন দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও ছাত্রলীগ ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপমন্ত্রী মহোদয়কে পুরো ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। পুলিশি তৎপরতায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ মূল হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি স্বীকারও করেছেন। ঘটনার ইন্ধনদাতাদেরও খুঁজে বের করতে তদন্ত অব্যাহত আছে।’