Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রস্তুতি ছাড়াই রাস্তায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা

নয়াপল্টনে পলওয়েল মার্কেটের সামনের নির্ধারিত স্থানে পার্কিং। ছবি: প্রথম আলো

যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই রাস্তার নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ইচ্ছামতো পার্কিং ফি আদায় করছে। উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আপাতত ফি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

গত ২০ ডিসেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের ৫৮টি স্থানে পার্কিং ব্যবস্থা চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে ২৬টি স্থান পড়েছে ডিএসসিসি এলাকায় এবং ৩২টি ডিএনসিসি এলাকায়। ট্রাফিক বিভাগ স্থানের তালিকা দুই সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিয়েছে। করপোরেশন এখন ট্রাফিক বিভাগের সহায়তায় তা বাস্তবায়ন করার কথা।

এ পর্যন্ত ডিএসসিসি ৭টি স্থানে এবং ডিএনসিসি ২৪টি স্থানে সড়কের ওপর পার্কিং ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পর্যায়ে কোন সংস্থা কী দায়িত্ব নেবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা প্রকাশ পেয়েছে কর্মকর্তাদের বক্তব্যে। 

অনুমোদিত স্থানের মধ্যে ১২টি স্থান ঘুরে ৬টিতে পার্কিং–সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা চোখে পড়েনি। আর দুটি স্থানে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের পার্কিং ফি আদায় করতে দেখা গেছে। বাকি ১০টি স্থানে পার্কিং ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রাফিক পুলিশ বা সিটি করপোরেশনের কাউকে দেখা যায়নি।

 বাস্তবতা হলো, ঘোষিত রাস্তায় পার্কিং নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত তদারকির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে আগের মতো যেখানে-যেখানে গাড়ি পার্ক করছেন চালকেরা।

সড়কে পার্কিংয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরই এর ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছিলেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবস্থাপনা ঠিক না হলে এই উদ্যোগ সফল হবে না। নির্ধারিত জায়গায় পার্কিংয়ের নির্দেশনার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। সেখানে যদি ফি নেওয়া হয়, তার পরিমাণসহ সব নির্দেশনা দেওয়া থাকবে। আর নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না, তা তদারকির দায়িত্ব পুলিশ ও সিটি করপোরেশনকে যৌথভাবে পালন করতে হবে। এ ছাড়া পার্কিং ব্যবস্থা চালু হওয়ার কারণে অবৈধ স্থানে কেউ যাতে গাড়ি পার্ক করতে না পারে, সে জন্য পুলিশে অভিযান জোরদার করতে হবে। যাতে মানুষ বৈধ জায়গায় গাড়ি পার্ক করতে উৎসাহিত হয়।

ডিএসসিসির অনুমতি অনুযায়ী, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে নেভি কল্যাণ ফাউন্ডেশন পর্যন্ত সড়কটির এক পাশে এক সারিতে গাড়ি পার্ক করা যাবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এক সারিতে পার্কিংয়ের জন্য ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আগের মতো দুই সারিতে গাড়ি পার্ক করা ছিল। একই অবস্থা দেখা গেছে বেইলি রোডে। সেখানে ট্রাফিক পুলিশ সাইনবোর্ড টাঙালেও পার্কিংয়ের অনুমতি দেয়নি ডিএসসিসি। সেখানে কোথাও দুই সারিতে, কোথাও তিন সারিতে, কোথাও সড়কের দুই পাশেই গাড়ি পার্ক করতে দেখা গেছে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তার উভয় পাশেই পার্কিংয়ের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ ও ডিএসসিসি। কিন্তু এই সড়কের বড় একটি অংশ দখলে রাখা হকার ও কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের জন্য কোনো পক্ষ থেকেই কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে এই সড়কে গাড়ি পার্ক করলে সাধারণ মানুষ হাঁটার জায়গাও পাবে না।

রাজউক অ্যাভিনিউর শিল্প ব্যাংক ভবন থেকে মতিঝিলের অ্যালিকো ভবন পর্যন্ত পার্কিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানেও আগের মতো হ–য–ব–র–ল অবস্থা চলছে।

পলওয়েল মার্কেটের সামনের সড়ক ও বায়তুল মোকাররম স্বর্ণ মার্কেটের সামনের রিং রোডে সিটি করপোরেশনের মনোনীত কর্মীদের পার্কিং ফি আদায় করতে দেখা গেছে। ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, এসব স্থানে গাড়িপ্রতি ঘণ্টায় ১৫ টাকা হারে পার্কিং ফি আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ওই দুই স্থান ঘুরে দেখা গেছে, মোটরসাইকেলের জন্য ১৫ টাকা করে ফি নিচ্ছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। কিন্তু গাড়ি রাখলেই দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা। অনেকের কাছে ৫০-৬০ টাকাও নেওয়া হয় বলে সেখানকার গাড়িচালকেরা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার বিকেলে স্বর্ণ মার্কেটের সামনের রিং রোডে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের কর্মী মো. সগীর। ফি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম ঘণ্টা ১৫ টাকা, দুই ঘণ্টা হলে ৩০ টাকা আর পরের প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০ টাকা হারে ফি দিতে হবে। বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত তিনি ৬০টি গাড়ি ও মোটরসাইকেলের পার্ক করার রসিদ দিয়েছেন। তাঁর রসিদ বইয়ের ৮-১০টি পাতায় ১৫ টাকা হারে পার্ক ফি লেখা আছে। বাকি পাতাগুলো ফাঁকা। এগুলোতে ফি লেখা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো সব ৩০ টাকার রসিদ। তাই লেখা হয়নি। পরে লিখবেন।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এভাবে পার্কিং ফি আদায় অনুচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি বলেন, ডিএসসিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা তার কাজ নয়। প্রয়োজনে ইজারাদার নিয়োগ করতে হবে এবং কঠোরভাবে ইজারাদারদের তদারক করতে হবে। সিটি করপোরেশন ইচ্ছেমতো ফি আদায় করলে ইমেজ সংকটে পড়বে সংস্থাটি।

এদিকে ডিএনসিসির অনুমোদিত ২৪টি স্থানে এখনো পার্কিং ফি দিতে হচ্ছে না। টোল ফ্রি এই ব্যবস্থার কারণ সম্পর্কে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষকে নির্ধারিত স্থানে গাড়ি রাখতে উৎসাহিত করতেই এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এটি সাময়িক।

ডিএনসিসির নির্ধারিত স্থানগুলোর মধ্যে গুলশান ১০৩ ও ১০৯ নম্বর সড়কের এক পাশে গাড়ি পার্ক করার কথা থাকলেও বুধবার দুপুরে দুই পাশেই গাড়ি পার্ক করে রাখতে দেখা গেছে। এই দুই সড়কে পার্কিং–সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা নেই। নির্ধারিত এই দুই সড়ক ছাড়াও গুলশান ১ থেকে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বরে যাওয়ার মূল সড়কের বিভিন্ন অংশে গাড়ি পার্ক করে রাখতে দেখা গেছে।

তবে উত্তরার ১ ও ৩ নম্বর সেক্টরের দুটি সড়ক ঘুরে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের পক্ষ থেকে গাড়ি পার্ক করা–সংক্রান্ত সাইনবোর্ড দেখা গেছে। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনার জন্য কাউকে দেখা যায়নি। এই দুই সড়ক ছাড়াও আশপাশের অনুমোদনহীন সড়কেও গাড়ি পার্ক করে রাখতে দেখা গেছে।

মিরপুরের অধ্যক্ষ আবুল কাশেম সড়ক এবং চিড়িয়াখানা রোড দুটির নির্দিষ্ট অংশে এক সারিতে ২০টি করে মোট ৪০টি গাড়ি পার্ক করতে বলেছে পুলিশ ও ডিএনসিসি। কিন্তু বুধবার দুপুরে দুই সড়কেরই উভয় পাশে আগের মতোই গাড়ি পার্ক করে রাখতে দেখা গেছে।

ঘোষিত সব সড়কে পার্কিং–সংক্রান্ত নির্দেশনা নেই। এই নির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব কার জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, ‘মেনটেইন্যান্সের মূল দায়িত্বটা তারাই (সিটি করপোরেশন) পালন করবে। আমরাও সহযোগিতা করব। সেভাবেই আমরা কাজ করছি।’

তবে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ইজারা দিয়ে ফি আদায় না করা পর্যন্ত নির্দেশনার দায়িত্বটি ট্রাফিক পুলিশকেই পালন করতে হবে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন রাজধানী প্রতিবেদক ড্রিঞ্জা চাম্বুগং গোলাম রব্বানী