Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রার্থনায় বিদ্যার দেবীর বন্দনা

সরস্বতীর বন্দনা

ছোট্ট অর্ক রায় মায়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কারও কাছে শুনেছে বিশাল এক ভায়োলিনে দেবী বসে আছেন। অর্কের পিছু পিছু ছুটে দেখ গেল—ঠিক তাই। বেশ উঁচু আকৃতির একটি ভায়োলিন। তার মধ্যে দেবী সরস্বতী আসন গেড়ে বসেছেন। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের মণ্ডপ।

আজ সোমবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপন চলছে। বিদ্যার দেবী সরস্বতীকে দেখতে বা বন্দনা জানাতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ নিজস্ব ভাবনা অনুযায়ী মণ্ডপ সাজিয়েছে। ভক্তি-বন্দনার পাশাপাশি কোন বিভাগের মণ্ডপ বেশি সুন্দর, চলছে তারও বিশ্লেষণ।

পূর্ণিমা রায় ছেলে অর্ককে নিয়ে সকাল থেকেই জগন্নাথ হলে আছেন। চার বছরের অর্ক এবারই প্রথম এত বড় পরিসরে সরস্বতীপূজা দেখছে। পূর্ণিমা বলেন, ‘ভক্তির পাশাপাশি চেনাজানাও হবে। তাই ওকে নিয়ে আসা।’

অর্থনীতি বিভাগের মণ্ডপের সামনে পুরোহিত মন্ত্র পড়ে চলছেন। তাঁর সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। বন্দনার বিষয়টি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও উৎসবের অংশীদার সবাই। সেজেগুজে মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর ছবি তোলা তুলছেন আগত দর্শনার্থীরা। সাফিনা রেহনুম মিরপুর থেকে বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন। সাফিনা বলেন, ‘ছোটবেলাতে স্কুলে সরস্বতীপূজায় আমরাও অংশ নিতাম। আর তখন প্রসাদ নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। এখানে এলে ভালোই লাগে। একসঙ্গে অনেক মণ্ডপ দেখা যায়।’ সাফিনার বন্ধু তমাল মোরসালিন বলেন, ‘আমরা বাঙালিরা ধর্মীয় উৎসবগুলোকে গণ্ডির মধ্যে রাখি না। সবাইকে নিয়েই উৎসব হয়।’

পুকুরের জলে ভাসছে বিশাল আকৃতির সরস্বতী। জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ছবি: প্রথম আলো

ক্রিমিনোলজি বিভাগের সামনে নিরাপত্তাবেষ্টনীর মতো ফিতা দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। উৎসুক জনতা আবার তা আগ্রহ নিয়ে দেখছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ মণ্ডপের করা হয়েছে বড় দুটি হাত দিয়ে। একটি লাল ও অন্যটি হলুদ। এ বিভাগের আয়োজকদের একজন দীপক চন্দ্র রায় তাঁদের মণ্ডপ নিয়ে বলেন, ‘দুটি ভিন্ন সম্প্রদায়ের হাত মিলিত হয়েছে একটি কলমের মাধ্যমে।’

জগন্নাথ হলের পুকুরে বরাবরের মতোই চারুকলার মণ্ডপটি সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। ভিড়ের মধ্যে ঠেলেঠুলে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়েই দেবীর সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িক। অন্যদিকে হলের মূল উপাসনালয়েও পূজা চলছে। মণ্ডপ ঘুরে সবাই এসেই ভিড় করছেন খাবারের দোকানগুলোতে। অনেকটা মেলার মতোই আয়োজন। নাগরদোলা থেকে শুরু করে খেলনাপাতির দোকানও পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব এই সরস্বতীপূজা। শাস্ত্রমতে প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবী সরস্বতীর বন্দনা করা হয়।