Thank you for trying Sticky AMP!!

প্লাবিত নয়টি কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব ইসিতে

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) শূন্য আসনে ১৪ জুলাই উপনির্বাচনে বন্যাকবলিত দুই উপজেলার অন্তত নয়টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এই নয়টি কেন্দ্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

এর মধ্যে বন্যাপ্লাবিত সোনাতলা উপজেলার তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সম্ভব না হওয়ায় তা পার্শ্ববর্তী বিকল্প স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সোনাতলা উপজেলায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা এ এস এম জাকির হোসেন রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে এই চিঠি পাঠান।

অন্যদিকে, গতকাল বিকেলে বন্যাদুর্গত এলাকার ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে বগুড়ায় সদ্য যোগদান করা জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক সারিয়াকান্দি উপজেলার বন্যাপ্লাবিত ছয়টি কেন্দ্র বিকল্প স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নির্বাচন–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বর্তমানে পানিবন্দী। বসতবাড়ির সঙ্গে দুর্গত এলাকায় তলিয়ে গেছে ১৪ জুলাইয়ের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ঘোষিত বেশ কিছু কেন্দ্র।

কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে সোনাতলা উপজেলায় তিনটি এবং সারিয়াকান্দি উপজেলায় অন্তত ছয়টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা সম্ভব নয়। সোনাতলা উপজেলার জলমগ্ন তিনটি কেন্দ্র হলো তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়নের মহেশপাড়া চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেকানীচুকাইনগর পিএম দাখিল মাদ্রাসা এবং বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব ভোটকেন্দ্রে বর্তমানে দুই থেকে তিন ফুট পানি। এ অবস্থায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষ থেকে মহেশপাড়া চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদে, তেকানীচুকাইনগর পিএম দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র তেকানীচুকাইনগর এ এম উচ্চবিদ্যালয়ে এবং বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র প্রতিভা আদর্শ শিশু নিকেতনে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

সোনাতলা উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এ এস এম জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বন্যা পরিস্থিতির কারণে তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সম্ভব নয়। এসব কেন্দ্র বিকল্প স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইসিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, সারিয়াকান্দি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৬৮টি গ্রাম বর্তমানে বন্যাকবলিত। এ উপজেলায় পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। দুর্গত এলাকায় বেশ কিছু ভোটকেন্দ্র রয়েছে।

জানা গেছে, বগুড়ার নবাগত জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক যোগদানের এক দিনের মাথায় গতকাল সারিয়াকান্দি উপজেলার দুর্গত এলাকার ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি যমুনা নদীর দুর্গম বেশ কয়েকটি চর ঘুরে বন্যায় প্লাবিত কেন্দ্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন।

সারিয়াকান্দির ইউএনও মো. রাসেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের দুর্গম চরের বিরামের পাঁচগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর চালুয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাটশেরপুর ইউনিয়নের চকরতিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুতুবপুর ইউনিয়নের ঘুঘুমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নিজামউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৪ জুলাই ভোট গ্রহণ করা সম্ভব নয়। সরেজমিনে দেখে ডিসি স্যার এই ছয়টি কেন্দ্র বিকল্পস্থানে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেন। ডিসি স্যারের সুপারিশ মোতাবেক ওই ছয়টি কেন্দ্র পার্শ্ববর্তী স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

এর মধ্যে বিরামের পাঁচগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র চর কর্নিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, চর চালুয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পাকেরদহ-২ নির্মাণাধীন গুচ্ছগ্রামে, চকরতিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র হাটশেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ঘুঘুমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র আয়েশা-ওসমান বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ও নিজাম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র মথুরাপাড়া বিকে উচ্চবিদ্যালয়ে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে বন্যা ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উপেক্ষা করে ইসি ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে গত রোববার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠক শেষে ভোট বর্জনের এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন পর্যন্ত তিন দফায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রয়াত নেতা আবদুল মান্নান। গত ১৮ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যুর কারণে আসনটি শূন্য হয়। নির্বাচন কমিশন ২৯ মার্চ ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণা করে। ৯ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণা শুরু করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোকছেদুল আলম (লাঙ্গল), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম (বটগাছ), বাংলাদেশ প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) মো. রনি (বাঘ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসির রহমতুলল্লাহ (ট্রাক)।

মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় প্রার্থীদের প্রচারে ছেদ পড়ে। ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।