Thank you for trying Sticky AMP!!

ফজলে রাব্বী ও শামসুল হকের দায়িত্ব পালন করল দুই কিশোরী

ফজলে রাব্বী মিয়া ও শামসুল হক টুকুর নির্ধারিত চেয়ারে দুই কিশোরী বসে প্রতীকী দায়িত্ব পালন করে। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সভা চলছিল। এ সভার আয়োজন করেছে সংসদীয় শিশু অধিকারবিষয়ক কমিটি। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এবং কমিটির চেয়ারপারসন শামসুল হক টুকুও সভায় উপস্থিত ছিলেন। তবে এই দুজন তাঁদের নির্ধারিত চেয়ারে বসেননি। সভায় এই দুজনের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, তা পালন করছে সাদিয়া সুলতানা ও মারিয়াম আক্তার নামের দুই কিশোরী। মঞ্চের সামনে চেয়ারে বসা সাংসদেরা এই দুই কিশোরী পরিচালিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন।

আজ বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এ দৃশ্য দেখা যায়। প্রথমে শুধু পদের অদল-বদলের কথা থাকলেও শামসুল হকের প্রস্তাবে চেয়ারও পাল্টে যায়। দুই কিশোরী ফজলে রাব্বী মিয়া এবং শামসুল হকের জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসেই সভা পরিচালনা করে। ফজলে রাব্বী মিয়া এভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর-প্রক্রিয়াকে ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর’ বলে উল্লেখ করেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের বিশ্বব্যাপী #গার্লসটেকওভার বা ক্ষমতা গ্রহণের জন্য প্রতীকী কর্মসূচির অংশ হিসেবেই কিশোরীরা এ দায়িত্ব পালন করে।

ক্ষমতা গ্রহণের এই অনুষ্ঠানে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক ওরলা মারফি বিশ্বব্যাপী কার্যক্রমটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে #গার্লসটেকওভার বা ক্ষমতা গ্রহণের জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। চলতি বছর বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশের ১ হাজারের বেশি কন্যাশিশু এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। ৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। প্রতীকী ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে কন্যাশিশুরা তাদের সমতা, স্বাধীনতা এবং ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার দাবি তুলছে। একই সঙ্গে তারা বৈষম্য, সহিংসতা ও জেন্ডার অসমতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে। বাংলাদেশে নতুন ক্যাম্পেইন ‘মেয়ে আমি সমানে সমান’-এর আওতায় এই প্রতীকী ক্ষমতা গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ১ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্ষমতা গ্রহণের এই প্রতীকী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের কোনো এক প্রান্তের এক কিশোরী জাতীয় সংসদ ভবনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদের হয়ে সভা পরিচালনা করছে, নয়তো অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব পালন করছে, তো আরেক কিশোরী দায়িত্ব পালন করছে সংবাদপত্র বা বেসরকারি টেলিভিশনের সর্বোচ্চ পদে বসে।

সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারের অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সংসদীয় শিশু অধিকারবিষয়ক কমিটির প্রধান উপদেষ্টার পদে দায়িত্ব পালন করে সাদিয়া সুলতানা। সে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এক চোখে ভালোভাবে দেখতে না পাওয়ার প্রতিবন্ধকতা তার কোনো কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি প্রকল্পের আওতায় সাদিয়া তার বাবার জমিতে পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল পরিচালনা করছে এবং সেখানে সে শিক্ষকতা করছে। ভয় লেগেছে কি না—জানতে চাইলে সভা শেষে হাসিমুখেই সাদিয়া বলল, ‘এতে ভয়ের কী আছে? ভবিষ্যতে তো এই চেয়ারগুলোতে আমরাই দায়িত্ব পালন করব।’

সংসদীয় শিশু অধিকারবিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন শামসুল হকের দায়িত্ব পালন করে কিশোরী মারিয়াম আক্তার। সে রাজধানীর মিরপুর শাখার সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতায় পরিচালিত চাইল্ড পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে সে দায়িত্ব পালন করছে।

বক্তব্যে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশে শিশুরা সেক্সুয়াল হেরাজমেন্টের শিকার হচ্ছে না, তা বলছি না। কিন্তু অনেক কম হচ্ছে। পলিটিক্যাল ফায়দা নিতে বা ফেসবুক বা কিছু মিডিয়ায় এ ধরনের কিছু ঘটনা আসে। তবে এসব ঘটনার সত্যতা শূন্যের কোঠায়।’

বক্তব্য শেষে ফজলে রাব্বী মিয়া সাদিয়া সুলতানার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তোমার হলো শুরু, আমার হলো শেষ।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংসদীয় শিশু অধিকারবিষয়ক কমিটির ভাইস চেয়ার অ্যারোমা দত্ত।