Thank you for trying Sticky AMP!!

ফেসবুকের মাধ্যমে ১৪ বছর পর হেলেনার ঘরে ফেরা

হেলেনা আক্তারের পাশে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মারোতের কর্মীরা।

ছয় বছরের সংসার ছিল তাঁদের। সেখানে আচমকা নেমে এল কালো মেঘের ছায়া। হেলেনা আক্তার মিমিয়ার আচমকা দেখা দেয় মানসিক ভারসাম্যহীনতা। চলে এলেন বাবার বাড়িতে। সেখান থেকেই চলছিল চিকিৎসা। সেখান থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন হেলেনা। খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি তাঁর সন্ধান। এক যুগের আগের সে ঘটনা।

কিন্তু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কল্যাণে ১৪ বছর পর তাঁকে খুঁজে পেল পরিবার। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে সংগঠনটির মানসিক রোগীদের নিয়ে কার্যক্রম ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল। সেখান থেকেই তাঁকে শনাক্ত করা হয়।  

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গোলখালী গ্রামের শরীফ আলীর ফেদার মেয়ে হেলেনা। তিনি ছিলেন ১০ ভাইবোনের সবার ছোট। স্বামীর সংসারের ছয় বছর কাটালেও তাঁর কোনো সন্তান ছিল না। পটুয়াখালী থেকেই একদিন হারিয়ে যান তিনি। ১৪ বছর পর গতকাল সোমবার টেকনাফে গিয়ে তাঁকে ফিরে পায় তাঁর পরিবার। এদিন রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার আল জামিয়া ইসলামিয়া মার্কেটের সামনে পরিবারের কাছে হেলেনাকে হস্তান্তর করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানসিক রোগীদের তহবিল (মারোত)।

হেলেনার বড় ভাই মোহাম্মদ ইসহাক ফেদা বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে হেলেনার বিয়ে হয় পাশের গ্রামের আবদুল মালেকের সঙ্গে। তবে তাঁদের কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। ২০০৭ সালে জুন মাসের শেষের দিকে হঠাৎ করে তিনি হারিয়ে যান। বিভিন্ন স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজির পর হঠাৎ একদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মারোতের কিছু ছবিতে তাঁকে খুঁজে পান। করোনায় মারোত মানসিক রোগীদের খাবার বিতরণ করে আসছে। সেসব কার্যক্রমের ছবি ও ভিডিওতে হেলেনাকে দেখে টেকনাফে এনজিওতে কর্মরত এক ব্যক্তি তাঁকে শনাক্ত করেন। তিনি সেসব ভিডিও ও ছবি আমাদের কাছে পাঠালে আমরা তাঁকে শনাক্ত করি।’ এরপর মারোত সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বোনকে খুঁজে পেয়েছেন।

ইসহাক ফেদা আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণে রোধে এখন সারা দেশে লকডাউন চলছে। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও হারিয়ে যাওয়া বোনের সন্ধান পাওয়ার পর এ লকডাউনকে উপেক্ষা করে আমি পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে টেকনাফে ছুটে এসেছি এবং বোনকে পেয়েছি। মারোতের সদস্যরা মিমিয়াকে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বাড়িতে যাতায়াতের জন্য আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমার পুরো পরিবার এ সংগঠনের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
পরিবারের কাছে হেলেনাকে হস্তান্তর করার সময় উপস্থিত ছিলেন মারোতের সভাপতি আবু সুফিয়ান, সহসভাপতি-ঝুন্টু বড়ুয়া, উপদেষ্টা সাইফুল হাকিম, সাধারণ সম্পাদক রাজু পাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, সাখাওয়াত তালুকদার প্রমুখ।

সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আরও একজন মানসিক রোগীকে হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মারোতের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া ২৯ জন নারী-পুরুষকে পরিবারের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল বলেন, করোনা মহামারিতে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার শতাধিক মানসিক রোগীর মধ্যে প্রতিনিয়ত এক বেলা খাবার তুলে দিয়ে আসছে মারোত।

জানা যায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মানসিক রোগীদের তহবিলের (মারোত) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি, চিকিৎসক, শিক্ষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মিলিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।

তাঁদের আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে এ সংগঠনটি পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠা থেকেই মানসিক রোগীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে সংগঠনটি। অসহায় এসব মানুষকে চিকিৎসাসেবা, শীতবস্ত্রের পাশাপাশি সৎকার ও দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া মানুষকে পরিবারের কাছেও পৌঁছে দেন তাঁরা। এ ছাড়া করোনা মহামারিতে টেকনাফে মানসিক রোগী ও ভারসাম্যহীন লোকদের কথা বিবেচনা করে গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে প্রতিদিন খাবার বিতরণ করে আসছে।

মারোতের কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মানবতা কী, এ সংগঠন শিখিয়ে দিয়েছে। কিছু উদ্যমী লোকজন মিলে এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রতিনিয়ত মানসিক রোগীদের নানা ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা ও খাবার দিয়ে আসছে। তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় টেকনাফে মানসিক রোগীদের জন্য একটি হাসপাতাল করার উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।