Thank you for trying Sticky AMP!!

ফোন পেলেই অসহায়দের কাছে ছুটে যাচ্ছেন এক সমাজসেবা কর্মকর্তা

সংবাদপত্রের হকারদের মাঝে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু সাঈদ মো. কাওছার রহমান। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দিশেহারা খেটে খাওয়া মানুষ। শত কষ্টের মধ্যেও যাঁরা কখনো মানুষের কাছে হাত পেতে খাওয়ার কথা চিন্তাও করেননি, তাঁরাও এখন দুমুঠো ভাতের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছেন। এই যেমন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাথাইল চাপর গ্রামের প্রতিবন্ধী এক তরুণী।

মা–বাবা মারা যাওয়ায় দুই বোনের কষ্টের সংসার। দারিদ্র্য আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই অভাবের সংসারে দুমুঠো ভাতের জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে দুই বোনকে। লজ্জায় কারও কাছে হাত পাততে পারছেন না। অবশেষে মধ্যরাতে ফোন দেন একটি নম্বরে। সকালে চাল, ডাল, সয়াবিন, লবণসহ ব্যাগভর্তি খাবার নিয়ে হাজির এক ব্যক্তি। খাবারের সঙ্গে বাজার করার জন্য দেওয়া হলো নগদ এক হাজার টাকা।

শুধু এই তরুণী নন, এক মাস ধরে কষ্টে থাকা প্রতিবন্ধী, হিজড়া, রিকশাচালক, শ্রমিক, গৃহপরিচারিকা, হরিজনসহ ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। অচেনা কারও ফোন পেয়ে খাবারভর্তি ব্যাগ নিয়ে বাড়িতে হাজির হয়েছেন, অনাহারে থাকার খবর পেয়ে কারও বাড়িতে ছুটে গেছেন।

মানবিক সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই ব্যক্তির নাম আবু সাঈদ মো. কাওছার রহমান। তিনি বগুড়ার জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক। প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। পরে এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে অসহায় মানুষকে খাদ্যসহায়তায় এগিয়ে আসেন অন্যরাও।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই বগুড়ার আকাশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। শহরের রেলওয়ে বস্তির খুপড়ি ঘরের বাসিন্দা রূপালী বেগমের (২৬)। ঘরে খাবার নেই। তাঁর স্বামী মাবুদ মিয়া রিকশাচালক। এক মাস ধরে রিকশার চাকা ঘোরেনা। রূপালী নিজেও শহরের বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। সেই কাজও বন্ধ। দিশেহারা রূপালী বস্তির পাশে পানির ট্যাংকি লেনে এক বাসায় খাবার চাইতে আসেন। ওই বাসার একজন তাঁকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের মুঠোফোন নম্বর দেন। সেই নম্বরে ফোন দেওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রূপালীর অসহায় পরিবারের জন্য খাবারভর্তি ব্যাগ নিয়ে বস্তিতে হাজির হন কাওছার রহমান। বস্তির আরও ১০টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তার প্যাকেট উপহার দেন। প্যাকেটে ছিল পাঁচ কেজি চাল, দেড় কেজি ডাল, আধা লিটার সয়াবিন, দুই কেজি আলু, লবণ, শুকনো মরিচ।

রূপালী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। এক মাস ধরে ভাতের কষ্টে রয়েছেন। এক বেলা খাবার জুটলে আরেক বেলা অনাহারে কাটছে। শিশু কন্যার কষ্ট সইতে না পেরে বস্তির পাশে মহল্লায় খাবার চাইতে গিয়েছিলেন। সেখানেই ওই স্যারের নম্বর পেয়ে ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন দেন। একটু পরে খাবার নিয়ে হাজির ওই স্যার।

আবু সাঈদ মো. কাওছার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিনই কেউ না কেউ ফোন দিয়ে কষ্টের কথা বলেন। সাধ্যমতো তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে শহরের শ্রমজীবী পরিবারকে খাদ্য ও অর্থসহায়তার মাধ্যমে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। এ উদ্যোগে সাড়া দেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। নিজেদের বেতনের অর্থে ১৫০ অসহায় পরিবারকে এক সপ্তাহের খাবার সহায়তা দেওয়া হয়। পরে সহায়তার হাত বাড়ান অন্যরাও। এ পর্যন্ত ফোন পেয়ে শতাধিক অসহায় পরিবারকে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার খাদ্যসহায়তার প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়েছে ৩০ জন হিজড়ার হাতে। দুদিন আগে সংবাদপত্র বিতরণের মাধ্যমে জীবিকা চালানো ১০০ দরিদ্র হকার ও সংবাদপত্রশিল্পের সঙ্গে জড়িত অসহায় পরিবারকে খাদ্যসহায়তার প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শিবগঞ্জ উপজেলায় ভাতা কর্মসূচির বাইরে থাকা ১০০ প্রতিবন্ধীর হাতে সহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে।

আবু সাঈদ মো. কাওছার রহমান বলেন, এ পর্যন্ত নিজস্ব উদ্যোগে করোনায় কর্মহীন ৫০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে অসহায় ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দ মিলেছে ৭ লাখ টাকা। মাথাপিছু ৫০০ টাকা হারে ১২ উপজেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে ১ হাজার ৪০০ পরিবারের হাতে এই সহায়তার অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে।