Thank you for trying Sticky AMP!!

ফড়িয়াদের হাতেই নিয়ন্ত্রণ

চলতি আমন মৌসুমে বগুড়ার আদমদীঘিতে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। কৃষকদের কাছ থেকেও গুদামে ধান বিক্রিতে তেমন সাড়া মিলছে না। সংগ্রহ অভিযান শুরুর দেড় মাস পার হলেও বরাদ্দ করা ধানের চার ভাগের এক ভাগও সংগ্রহ করতে পারেনি উপজেলা খাদ্য বিভাগ। এ জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যকে দায়ী করেছেন সাধারণ কৃষকেরা।

উপজেলায় এখনো সরকার–নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ধানের বাজারমূল্য অনেক কম রয়েছে। এরপরও সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির আগ্রহে ভাটা অবাক করার মতোই। গত দেড় মাসে উপজেলার তিনটি খাদ্যগুদামে মাত্র ৩৪২ মেট্রিক আমন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার নসরতপুর এলএসডিতে ১৭০, আদমদীঘি সদর এলএসডিতে ১২২ এবং সান্তাহার এলএসডিতে মাত্র ৫০ জন কৃষক ধান বিক্রি করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লটারি বিজয়ী কয়েকজন কৃষক জানান, তাঁদের ঘরে ধান থাকলেও গুদামের নানা আমলাতান্ত্রিক ঝামেলার কারণে গুদামে গিয়ে ধান বিক্রি করেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ধান বিক্রিতে বেঁধে দেওয়া শর্ত অনেক সাধারণ কৃষক ঝামেলাপূর্ণ মনে করছেন। অনেকেরই কৃষি কার্ড হালনাগাদ না থাকার কারণে লটারিতে অংশ নিতে পারেননি। এভাবে বহু প্রকৃত কৃষক বাদ পড়েছেন। এ ছাড়া ভালোভাবে ধান শুকানো ও নির্দিষ্ট আর্দ্রতা থাকার শর্ত, স্থানীয়ভাবে ওজন করে নিয়ে গিয়ে গুদামে ওজনে কম হওয়ার কারণে ধান ফেরত পাঠানো, সরকারিভাবে ধান বিক্রির অর্থ উত্তোলনে ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সাধারণ কৃষকদের অনেকেই এসব প্রক্রিয়াকে ঝামেলাপূর্ণ মনে করছেন। এসব প্রক্রিয়া সহজ করতে খাদ্য বিভাগের তেমন কোনো উদ্যোগও নেই।

ধান সংগ্রহ কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য বলে জানা গেছে। সরকারি ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে বাজারমূল্যের চেয়ে গুদামের ধানের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় এই ধান বিক্রিকে কেন্দ্র করে একধরনের মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়া চক্র গড়ে উঠেছে। ফড়িয়াদের সঙ্গে খাদ্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খাদ্য কর্মকর্তারা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে ফড়িয়াদের সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে। ফলে একজন সাধারণ কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে যত নিয়মকানুন দেখানো হয়, ফড়িয়াদের ধান বিক্রিতে এসব নিয়মকানুন থাকে না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। ফলে ভোগান্তি এড়াতে অনেক কৃষক ফড়িয়াদের কাছে স্লিপ বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে ধান না দিয়েও ওই সব কৃষক দুই থেকে তিন হাজার টাকা পাচ্ছেন।

এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, লটারিতে এমন সব লোকের নাম রয়েছে, যাঁরা আসলে ধানচাষি নন। তাঁদের নাম কৃষকের তালিকায় ফড়িয়ারাই যোগসাজশ করে ঢুকিয়েছেন। ওই সব ভুয়া ধানচাষিদের স্লিপ এখন ফড়িয়াদের দখলে। অথচ অনেক প্রকৃত ও অভাবী চাষির নামই লটারিতে ওঠেনি। ফলে তাঁরাও বাধ্য হয়ে ফড়িয়াদের কাছে সরকারি রেটের চেয়ে কম মূল্যে ধান বিক্রি করেছেন। যাঁরা তা–ও পারেননি, তাঁরা হাটবাজারে অনেক কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

এসব ঘটনার প্রভাব পড়েছে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে। স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, ফড়িয়ারা গুদামে ধান দেবেন একেবারে মৌসুমের শেষ দিকে। আগের বোরো মৌসুমেও তাঁরা তাই করেছেন। ওই সময়টায় প্রশাসনের নজরদারি শিথিল হয়ে পড়ে বলে অন্যের কাছ থেকে কেনা স্লিপে তখন ধান বিক্রিকে তাঁরা নিরাপদ মনে করেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব কৌশলী ফড়িয়া ইতিমধ্যে গুদামে দেওয়ার ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। ইরি-বোরো মৌসুমের মতো আমন সংগ্রহ অভিযানের শেষ দিকে তাঁরা গুদামে ধান দেবেন।

এসব অভিযোগের বিষয়টি মাথায় না নিয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পরিতোষ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘ধান সংগ্রহের জন্য এখনো অনেক সময় রয়েছে। আশা করছি, বাকি সময়ের মধ্যে কৃষকেরা সরাসরি গুদামে এসে ধান বিক্রি করবেন।’