Thank you for trying Sticky AMP!!

বইমেলায় ড. ফয়জুর রহমান স্যারের সঙ্গে কয়েক মিনিট

ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকের বই ‘বাংগালীর জয় বাংগালীর ব্যর্থতা’। ছবি: লেখক

এবারের বইমেলা শুরু কয়েক দিন পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম, দেশের একজন প্রথিতযশা পরমাণুবিজ্ঞানী তাঁর লেখা বই কয়েক কপি প্রিন্ট করে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে ঘুরে বিক্রির চেষ্টা করছেন। কোনো প্রকাশনী নাকি তাঁর বই ছাপাতে চায়নি। তাই নিজে থেকেই বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মানুষটি নিজেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বই বিক্রির জন্য নেমে পড়েছেন। যাহোক, তার পরেই কাহিনি আমাদের সবারই জানা। অবশেষে দেশের কয়েকটা প্রকাশনী বই প্রকাশের জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। সেই মানুষটির নাম ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিক।

গুগল করে ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিক সম্পর্কে জেনে চোখ তো চড়কগাছ। এমন হাইপ্রোফাইল, জ্ঞানী মানুষেরও কিনা বই বিক্রির জন্য ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ফেরি করতে হয়।

যাহোক, ইচ্ছা ছিল এবার বইমেলায় গেলে ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকের বই একটা কিনব। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের বন্ধু রনিকে নিয়ে এবারের মেলার শেষ দিনে রওনা দিলাম। দিনটি আবার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অধিবর্ষ প্রতি চার বছর পরপর আবার ফিরে আসে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তারপরও বেশ কিছুক্ষণ জ্যাম ঠেলে বইমেলায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা।

ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকের সঙ্গে লেখক। ছবি: সংগৃহীত



বইমেলা শেষ দিনে তখন আমাদের মতো হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণে মুখরিত। দুই বন্ধু মিলে স্টল স্টলে ঘুরছি। কয়েকটা স্টলে ঢুঁ মেরে কয়েকটা বই হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখলাম। জাফর ইকবাল স্যারের সায়েন্স ফিকশনটা মনে মনে খুঁজছিলাম। অবশেষে একটা স্টলে বইটি পেয়ে গেলাম। ভিড় ঠেলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে বইটি কিনতে পারলাম। আবারও দুই বন্ধু মিলে এলোমেলোভাবে মেলার ভেতরে ঘুরতে লাগলাম। আর মনে মনে ভাবছি, ইশ্‌ যদি জাফর ইকবাল স্যার কিংবা ফয়জুর রহমান স্যারের দেখা পেতাম। তাঁদের সঙ্গে ছবি যদি তুলতে পারতাম।

দুজন মিলে হাঁটছি আর খোশগল্প করছি। হঠাৎ একটা প্রকাশনীর সামনে ছোট একটা জটলা দেখে চোখ আটকে গেল। ধুলাবালুর ওপর একটা প্লাস্টিকের চেয়ারের ওপর বসে থাকা একজন অশীতিপর মানুষকে ঘিরে ছোটখাটো জটলা। সবাই তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলছেন, কেউ আবার অটোগ্রাফ নিচ্ছেন। কাছে গিয়েই চিনতে পারলাম এই সেই বিদ্বান মানুষকে, যাঁকে মনে মনে খুঁজছিলাম। স্যার ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিক। বন্ধু রনিকে ডাক দিলাম, তারপর দুজন মিলে পাশের প্রকাশনী বাংলা প্রকাশ থেকে স্যারের লেখা বই ‘বাংগালীর জয় বাংগালীর ব্যর্থতা’ দুই কপি কিনে তাঁর সঙ্গে ছবি আর অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। কয়েকজনের পরে আমার পালা এল। তাঁকে সালাম দিয়ে পাশে থাকা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে পড়লাম। উনি মৃদু হেসে সালামের জবাব দিলেন। তারপর আমার ছেলের নামে শুভেচ্ছা জানিয়ে ওনার অটোগ্রাফ দিলেন। এমন বিদ্বান মানুষের পাশে বসে নিজের ভেতরে আলাদা একটা অনুভূতি, ভালো লাগা কাজ করছিল। রনিও ওনার সঙ্গে ছবি তুলল। অটোগ্রাফ নিল। আমরা দুই বন্ধু মিলে স্যারের সঙ্গে আরও কয়েকটা ছবি তুললাম। অবশেষে তাঁকে সালাম জানিয়ে বিদায় নিলাম। হাঁটতে হাঁটতে আবার পেছনে ফিরে দেখি বয়সের ভারে নুয়ে পড়া দেশের একজন পরমাণুবিজ্ঞানী ধুলাবালুর ওপরে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আপন মনে অটোগ্রাফ দিয়ে চলেছেন। মন থেকে তাঁর জন্য দোয়া করলাম। ভালো থাকুন ড. ফয়জুর রহমান স্যার।

লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (আইটি), সোনালী ব্যাংক